Javed Akhtar: 'লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেছে', ভারতে তালিবান মন্ত্রীর অভ্যর্থনায় ক্ষুব্ধ জাভেদ আখতার!

People's Reporter: জাভেদ আখতার লিখেছেন, “তালিবান, যারা বিশ্বের অন্যতম নৃশংস সন্ত্রাসী সংগঠন, তাদের প্রতিনিধিকে যে ধরণের সম্মান ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, এটা দেখে লজ্জায় আমার মাথা নুয়ে যাচ্ছে।”
জাভেদ আখতার
জাভেদ আখতার ফাইল চিত্র
Published on

তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সাম্প্রতিক দিল্লি সফর এবং দেওবন্দ মাদ্রাসায় তাঁর অভ্যর্থনা ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবার সেই নিয়ে সরব হলেন বলিউডের প্রবীণ গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতারও।

সোমবার রাতে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে জাভেদ আখতার লিখেছেন, “তালিবান, যারা বিশ্বের অন্যতম নৃশংস সন্ত্রাসী সংগঠন, তাদের প্রতিনিধিকে যে ধরণের সম্মান ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, এটা দেখে লজ্জায় আমার মাথা নুয়ে যাচ্ছে।”

শুধু তাই নয়, প্রভাবশালী ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরুল উলুম দেওবন্দকেও একহাত নেন আখতার। তাঁর বক্তব্য, “দেওবন্দেরও লজ্জা হওয়া উচিত। তারা এমন একজনকে হিরো হিসেবে বরণ করেছে, যিনি মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিরোধী। আমার ভারতীয় ভাই-বোন, আমাদের চেতনা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে?”

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর শিক্ষাগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, কর্মক্ষেত্রে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, প্রকাশ্যে মুখ খোলা বা কথা বলার ওপরও কড়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

গত শনিবার উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে পৌঁছন তালিবান বিদেশমন্ত্রী। সেখানে তিনি মাদ্রাসার উলামা, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসকদের সঙ্গে দেখা করেন এবং দেওবন্দের তরফে দেওয়া ‘উষ্ণ অভ্যর্থনার’ প্রশংসা করেন। মুত্তাকি বলেন, “আমি ভারতের মানুষের ভালোবাসা ও আতিথেয়তায় অভিভূত। আশা করি, ভারত-আফগান সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। কাবুল নতুন কূটনীতিক পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, আপনারাও আমাদের দেশে আসুন। দিল্লিতে যে অভ্যর্থনা পেয়েছি, তা ভবিষ্যতের সু-সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।”

তবে মুত্তাকির সফরের শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। দিল্লিতে আফগান দূতাবাসে আয়োজিত মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে নারী সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সাংবাদিক সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। সেই বৈঠকে যখন একজন সাংবাদিক নারী অধিকার প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, মুত্তাকি বলেন, “এসব শুধুই প্রচার। আমাদের দেশে শরিয়াহ আইন অনুযায়ী সবাই সমান অধিকার ভোগ করছে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও প্রথা রয়েছে।”

ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানায়, ওই সাংবাদিক বৈঠকের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক ছিল না। পরে তালিবান পক্ষ দাবি করে, বিষয়টি ছিল ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’, এবং বিতর্কের পর দ্বিতীয় এক সাংবাদিক বৈঠকে নারী সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এটি ছিল ভারতের মাটিতে কোনও তালিবান শীর্ষ নেতার প্রথম সফর, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দিয়েছে। ১৯৯৯ সালের আইসি–৮১৪ বিমান অপহরণের ঘটনার পর যে গভীর অবিশ্বাসের দেওয়াল গড়ে উঠেছিল, এবার তা ভাঙার ইঙ্গিত মিলছে।

৯ অক্টোবর মুত্তাকি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, ভারত কাবুলে তাদের ‘টেকনিক্যাল মিশন’-কে আপগ্রেড করে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, আফগানিস্তানও ধাপে ধাপে ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে কূটনীতিক পাঠানোর কথা জানিয়েছে।

তবে তালিবানকে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে তারা নারীদের শিক্ষা ও স্বাধীনতার অধিকারকে নির্মমভাবে সীমিত করে রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ বছরের মার্চ মাসে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সন্ত্রাস দমন ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানায়।

জাভেদ আখতার
মহিলা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা - আফগান বিদেশমন্ত্রীর প্রেস মিট বিতর্কে কী ব্যাখ্যা কেন্দ্রের?
জাভেদ আখতার
'মহিলাদের অপমান' - আফগান বিদেশমন্ত্রীর প্রেস মীট বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব প্রিয়াঙ্কা

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in