
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অবস্থিত সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি সেটা ভেঙে বহুতল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ভারত সরকারকে বিষয়টিতে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। ঢাকাকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে নয়াদিল্লি। এমনকি বাড়িটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশও করেছে নয়াদিল্লি।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাশাসক হুসেন মহম্মদ এরশাদ ওই বাড়িটি শিশু অ্যাকাডেমি হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। তবে ২০০৭ সালের পর থেকে বাড়িটি অব্যাবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র 'প্রথম আলো' এবং 'দ্য ডেলি স্টার'-এর তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি জেলার সদর শহরের হরিকিশোর রায় রোডে অবস্থিত প্রাচীন এই বাড়িটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায় কাজ শুরু করছে শিশু অ্যাকাডেমি। এমনকি ইতিমধ্যেই ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমাজ মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স-এ তিনি লেখেন, "খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত"।
তিনি লেখেন, "এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত"।
এরপরেই ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টিতে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেন। মমতা লেখেন, "আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন"।
এরপরেই নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, "বাংলাদেশের ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। যা তাঁর দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়ি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ওই সম্পত্তিটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে"।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, "বাংলায় নবজাগরণের সঙ্গে এই বাড়িটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই ভাঙার কাজ বন্ধ করে, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলে সেটাই মঙ্গলের হবে। বরং কীভাবে এটিকে নতুন করে গড়ে তোলা যায় বা কোনও সংগ্রহশালা হিসাবে গড়ে তোলা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা উচিত"। বাংলাদেশ সরকার উপেন্দ্রকিশোরের বাড়িটিতে কোনও সংগ্রহশালা করতে চাইলে ভারত তাতে সাহায্য করবে বলেও নয়াদিল্লি জানিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন