

প্রয়াত হলেন ভারতের বিজ্ঞাপন জগতে সৃজনশীলতার প্রতীক পিযূষ পাণ্ডে। বেশ কিছু দিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ফেভিকল, ক্যাডবেরি ও এশিয়ান পেইন্টস-এর মতো ব্র্যান্ডের বিখ্যাত বিজ্ঞাপন তৈরির নেপথ্যে ছিলেন তিনিই।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পিযূষ পাণ্ডে। তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন সংস্থা ওগিলভি (Ogilvy)-র চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার (Worldwide) এবং এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান (India)।
১৯৮২ সালে ওগিলভিতে যোগ দেন পান্ডে এবং তাঁর প্রথম বিজ্ঞাপন ছিল সানলাইট ডিটারজেন্ট-এর জন্য। ৬ বছর পর তিনি সংস্থার ক্রিয়েটিভ বিভাগে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে ফেভিকল, ক্যাডবেরি ডেয়ারি মিল্ক, এশিয়ান পেইন্টস, লুনা মপেড ও ফরচুন অয়েল-এর জন্য একের পর এক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন তৈরি করেন।
তাঁর বিজ্ঞাপনগুলির মধ্যে ক্যাডবেরি ডেয়ারি মিল্কের 'কুছ খাস হ্যায়', এশিয়ান পেইন্টসের 'হর খুশি মে রং লায়ে' ট্যাগলাইন জনপ্রিয়।
তাঁর নেতৃত্বে, ওগিলভি ইন্ডিয়া টানা ১২ বছর ধরে দ্য ইকনমিক টাইমস পরিচালিত স্বাধীন সমীক্ষা Agency Reckoner-এ ভারতের এক নম্বর বিজ্ঞাপন সংস্থা হিসেবে নির্বাচিত হয়।
শুধু বিজ্ঞাপনই নয় ২০১৪ সালে 'আবকি বার, মোদী সরকার', 'আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হে'-র মতো স্লোগানগুলিও তৈরি করেছিলেন পীযূষ পাণ্ডেই। ২০১৬ সালে বিজ্ঞাপনের জগতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পিযূষ পাণ্ডেকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি অভিনয় ও লেখালেখিতেও আগ্রহী ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে জন আব্রাহাম অভিনীত 'মাদ্রাস ক্যাফে' ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর রূপোলি পর্দায় অভিষেক হয়। এছাড়া তিনি আইসিআইসিআই ব্যাংক-এর ম্যাজিক পেন্সিল প্রোজেক্ট ভিডিও সিরিজেও অংশ নেন। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীক “মিলে সুর মেরা তুমহারা”-র গীতিকার ছিলেন তিনি।
পিযূষ পাণ্ডের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের বিজ্ঞাপন, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মহলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স মাধ্যমে লেখেন, 'পীযূষ পাণ্ডে ছিলেন তাঁর সৃজনশীলতার জন্য প্রশংসিত। বিজ্ঞাপনের জগতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। বছরের পর বছর ধরে আমাদের মধ্যে যে যোগাযোগ ছিল যা আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাঁর মৃত্যুতে আমি শোকাহত। তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা। ওম শান্তি'।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এক্স মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে লেখেন - “ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব - তিনি সাধারণ মানুষের ভাষা, মাটির গন্ধ এবং আন্তরিক উষ্ণতাকে বিজ্ঞাপনে তুলে এনেছিলেন। তাঁর উত্তরাধিকার আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
শোক জ্ঞাপন করেছেন বলিউড স্টার অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী, শিল্পপতি গৌতম আদানি সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক-এর প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাক বলেন, “দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, পিযূষ পাণ্ডে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। ২০০৩ সালে আমাদের ব্যাংকের সূচনালগ্নের বিজ্ঞাপন তিনিই করেছিলেন। যেখানে ব্যাংকিংকে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন ‘কমন সেন্স’ হিসেবে। অসাধারণ চিন্তাশক্তি ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁকে ভীষণভাবে মিস করব।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন