Nainital: ভরা মরশুমে ফাঁকা নৈনিতাল! পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরেই কি পর্যটকশূন্য এই শৈলশহর?

People's Reporter: নৈনিতাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, হোটেল এবং রিসোর্ট বুকিং ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এমনকি জুন মাসের বুকিং বাতিল হয়েছে।
Nainital: ভরা মরশুমে ফাঁকা নৈনিতাল! পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরেই কি পর্যটকশূন্য এই শৈলশহর?
ছবি - সংগৃহীত
Published on

ফাঁকা রাস্তা! নেই কোনও যানজট! বছরের এই সময় যেখানে পর্যটকে ঠাসা থাকে নৈনিতাল, সেখানে এখন ধু ধু করছে শহরটি। উত্তরাখণ্ডের নাশপাতি আকৃতির হ্রদের উপত্যকাতে অবস্থিত এই শহরে চলতি বছর হ্রাস পেয়েছে পর্যটক। মনে করা হচ্ছে, জুন মাসের মরশুমে এর থেকেও শোচনীয় অবস্থা হবে। কিন্তু কেন পর্যটক শূন্য শৈলশহর? পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরেই কি এই হাল? নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ।

এই নিয়ে নৈনিতাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিগ্বিজয় সিং বিশট এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, হোটেল এবং রিসোর্ট বুকিংয়ে ব্যাপক ভাবে পতন ঘটেছে। গত মাসে ৯০ শতাংশেরও বেশি বুকিং কমেছে। এমনকি জুন মাসের বুকিং বাতিল হয়েছে। ওয়াক-ইন গেস্টও নেই। আগের বছরের সঙ্গে সমীকরণ কোনও ভাবেই মিলছে না।

একই দাবি নৈনিতালের অন্যান্য হোটেল মালিক, ক্যাব পরিষেবা প্রদানকারী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। সকলেই জানাচ্ছেন, আচমকাই এত পরিমাণ পর্যটক হ্রাস পেয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বুকিং ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমেছে। এমনকি নৈনিতালের আবহাওয়া মনোরম থাকা সত্ত্বেও পর্যটকেরা ভীমতাল, মুক্তেশ্বর এবং অন্যান্য জায়গা বেছে নিচ্ছেন ঘোরার জন্য।

স্থানীয় এক ট্যাক্সি চালক জানিয়েছেন, তিনি নৈনিতলে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ট্যাক্সি চালান, কিন্তু চলতি বছর ক্যাব বুকিংয়ের হার ৫০ শতাংশ কমেছে। সাধারণত বার্ষিক বুকিংয়ের অধিকাংশই হয় মে-জুন মাসে। কিন্তু চলতি বছর সেটা না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্যাক্সি চালকরা।

নৈনিতালের জন্য পর্যটন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বছরের পর বছর ধরে এই পর্যটনই এখানের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে এই পর্যটন শিল্প। তাই আচমকা পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ স্থানীয়দের কপালে। কিন্তু হঠাৎ করে পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার নেপথ্যে কারণ কী?

সম্প্রতি ঘটে গেছে পহেলগাঁও কাণ্ড। যেখানে জঙ্গিহানায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন ছাড়া নিহত সকলেই পর্যটক। এই ঘটনার পর থেকে মানুষ শুধু কাশ্মীর নয়, অন্যান্য জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলিও এড়িয়ে যাচ্ছেন। নৈনিতালের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দিগ্বিজয় সিং বিশট বলেন, "কেরালায় আমাদের সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলাম। তাঁরা উত্তরাখণ্ডের অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। আমাকে জানায় পহেলগাঁও কাণ্ডের পর তাঁদেরও হোটেল বুকিং কমেছে। অনিশ্চয়তার এই পরিবেশের কারণেই সুপরিচিত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে বুকিং কমছে"।

এছাড়া নৈনিতালে পর্যটক কমার নেপথ্যে আরও একটা কারণ হতে পারে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। গত ১ মে এক ১২ বছরের নাবালিকা ৬০ বছরের বৃদ্ধের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনে। যা নিয়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয় নৈনিতালে। পুলিশ অভিযুক্ত ঠিকাদার ওসমানকে গ্রেফতার করে এবং এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়, মসজিদে পাথর ছোড়া হয়। মনে করা হচ্ছে এই ঘটনা পর্যটকদের মনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। যদিও মিঃ বিশট নৈনিতালকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলেই জানিয়েছেন।

পর্যটক সংখ্যা কমার নেপথ্যে স্থানীয়রা যেসমস্ত কারণ উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটকদের যানবাহন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা। এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পর্যটকরা নৈনিতালে নিজেদের গাড়ি আনতে পারছেন না। নৈনিতাল থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার দূরে গাড়ি পার্ক করতে বলা হচ্ছে। যাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যার।

এছাড়া সরকারি এলাকায় পাকিং চার্জ ১৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। যা অনেকটাই বেশি। তার উপর ভয়ংকর যানজট। কেউ ঘুরতে এসে ৬-৭ ঘন্টা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইবেন না। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, চেকপয়েন্টগুলিতে পুলিশও পর্যটকদের যানজটের সমস্যার কারণে নৈনিতালে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

আরও একটা কারণ হল টোল ট্যাক্সের প্রবর্তন। বড়পাথের এবং ফানশি ঘ্যান্ডেরার টোল ট্যাক্সগুলি এক নতুন পরিবেশ কর চালু করেছে। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে নৈনিতাল বোর্ডের সভায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। নতুন ট্যাক্সের লক্ষ্য যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা এবং এই অঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।

এনিয়ে নৈনিতালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, কর এবং পার্কিং চার্জ বৃদ্ধির উদ্দেশ্য হল যানজট নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়া এটাও নিশ্চিত করা, শহরে যাতে খুব বেশি গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে। এই চার্জগুলির মধ্যে রয়েছে ১১০ টাকা টোল ট্যাক্স, প্রতিদিন ৫০০ টাকা পার্কিং চার্জ এবং ১১০ টাকা লেক ব্রিজ ট্যাক্স। যেখান দিয়ে মল রোডে প্রবেশ করতে হয়।

তবে স্থানীয়রা আশাবাদী এই পরিস্থিতি শীঘ্রই কেটে যাবে। পর্যটকরা আবার আসবে। তারা জানাচ্ছেন, গত সপ্তাহে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বুকিং। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আগস্ট মাসে বৃদ্ধি পেতে পারে দর্শনার্থী।

Nainital: ভরা মরশুমে ফাঁকা নৈনিতাল! পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরেই কি পর্যটকশূন্য এই শৈলশহর?
Kerala: বিষাক্ত রাসায়নিক বোঝাই জাহাজ ডুবি, বিষক্রিয়ার আশঙ্কায় রাজ্য বিপর্যয় ঘোষণা কেরল সরকারের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in