
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুক্রবার বিশ্বের উচ্চতম রেল সেতু চেনাব ব্রিজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে শ্রীনগর-কাটরা রেলপথেরও উদ্বোধন করেন তিনি। যে লাইন দিয়ে ছুটবে বন্দে ভারত। আধুনিক প্রযুক্তির অপূর্ব নির্দশন এই চেনাব ব্রিজ। রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পও এই ব্রিজকে টলাতে পারবে না। এই ব্রিজ নির্মাণের মূল কাণ্ডারি অধ্যাপক জি মাধবীলতা। ১৭ বছর ধরে নীরবে নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে গেছেন এরকম একটি অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নির্দশনের জন্য।
কে এই জি মাধবীলতা?
বর্তমানে তিনি বেঙ্গালুরুর IISC-তে হায়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ গ্রেড অধ্যাপিকা পদে কর্মরত। ১৯৯২ সালে হায়দেরাবাদের জওহরলাল নেহেরু টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ওয়ারাঙ্গলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এম.টেকের ছাত্রী হিসেবে স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন। ২০০০ সালে আইআইটি-মাদ্রাজ থেকে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। IISC-তে আসার আগে গুয়াহাটিতে সহকারি অধ্যাপিকা হিসেবে কাজ করতেন মাধবী।
চেনাব ব্রিজ নির্মাণে মাধবীর ভূমিকা -
১৭ বছর ধরে মাধবী নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে গেছেন এই ব্রিজ নির্মাণের জন্য। ২০০৩ সালে চেনাব সেতু তৈরির প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল। ২০০৫ সালে প্ল্যানিংয়ের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে মূল কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। তার মাঝে রয়েছে হাজারো গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
প্রতিকূল পরিবেশে চেনাব ব্রিজ নির্মাণ ছিল একটি কঠিন কাজ। একেবারে শুরুতে নির্মাণকারী দলের ওই জায়গায় পৌঁছনোটাও ছিল প্রায় অসম্ভব। দুর্গম স্থানে ভারী ভারী নির্মাণ সরঞ্জাম কীভাবে পৌঁছবে, তা নিয়েও বিস্তর ভাবনা চিন্তা করতে হয়েছে। তবে সমস্ত ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনাতে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়। যাকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভাষায় ‘ডিজাইন অ্যাজ ইউ গো অ্যাপ্রোচ’ বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, মূল প্রজেক্টে ভিতগুলো যেখানে থাকার কথা ছিল সেখান থেকে সামান্য সরানো হয়েছে। ব্রিজের ভিত শক্তিশালী করার জন্য পাথরের টুকরো এবং স্টিলের রড দিয়ে সিমেন্ট গ্রাউটিং করা হয়। ২২০ কিমি বেগে হাওয়ার গতি সহ্য করতে পারবে এমন বড় এবং গভীর ভিত নির্মাণ করা হয়।
সম্প্রতি মাধবী ইন্ডিয়ান জিওটেকনিক্যাল জার্নালের মহিলাদের বিশেষ সংখ্যায় "ডিজাইন অ্যাজ ইউ গো: দ্য কেস স্টাডি অফ চেনাব রেলওয়ে ব্রিজ" শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। যেখানে চেনাব ব্রিজের নকশা কীভাবে ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে তা তিনি তুলে ধরেছেন।
চেনাব ব্রিজের অন্যতম মূল কান্ডারী মাধবীর ঝুলিতে রয়েছে বহু পুরস্কারও। ২০২১ সালে তাঁকে ইন্ডিয়ান জিওটেকনিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক সেরা মহিলা ভূ-প্রযুক্তিগত গবেষকের পুরষ্কার দেওয়া হয়। এর পরের বছর, ২০২২ সালে স্টেম অব ইন্ডিয়ার শীর্ষ ৭৫ মহিলার তালিকায় নাম ছিল তাঁর।
চেনাব রেলব্রিজ হল বিশ্বের উচ্চতম আর্চ ব্রিজ। জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার চন্দ্রভাগা নদীর উপর দিয়ে তৈরি হয়েছে এই ব্রিজটি। রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পও স্টিল ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি এই ব্রিজকে টলাতে পারবে না। এমনকি বড়সড় কোনও বিস্ফোরণেও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা শূন্যের নিচে থাকলেও এই সেতুর কিছু ক্ষতি হবে না। আবার ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারবে এটি।
চেনাব ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১.৩ কিলোমিটার। এই সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৪৮৬ কোটি টাকা। চন্দ্রভাগা নদী থেকে এই সেতুর উচ্চতা ৩৫৯ মিটার (১১৭৭.৮২ ফুট)। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার লম্বা এই সেতু। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন ছুটতে পারবে এই সেতুর উপর দিয়ে। রেল আধিকারিকদের কথায়, সন্ত্রাসবাদী হামলা ও ভূমিকম্পের জন্য ব্রিজে রয়েছে সুরক্ষা প্রণালী। এই সেতু ১২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে দাবি নির্মাতাদের।
Key Words: Chenab Bridge, PMNarendra Modi, Jammu and Kashmir, G Madhavi Latha
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন