সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে মৃত দুই ভাই, শেষ ২ মাসে রাজ্যে মৃত ৯ সাফাইকর্মী

মৃত দুই ভাইয়ের নাম সাদিকুল হক (৩১) এবং নবীর হক (৩৫)। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। সোমবার বেলা ১১ টা নাগাদ নিজের বাড়িতেই সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার জন্য নামে সাদিকুল হক।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীছবি সংগৃহীত

সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হল দুই ভাইয়ের। সোমবার এ ঘটনা ঘটেছে কোচবিহার জেলার দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের বড়নাচিনা কুটিপাড়া এলাকায়। মৃত দুই ভাইয়ের নাম সাদিকুল হক (৩১) এবং নবীর হক (৩৫)। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। শেষ ২ মাসে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে রাজ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বেলা ১১ টা নাগাদ নিজের বাড়িতেই সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার জন্য নামে সাদিকুল হক। নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সাহায্যের জন্য চিৎকার করেন। তখন সাদিকুলের দাদা নবীর হক সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষাক্ত গ্যাসের কবলে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তৎক্ষণাৎ পরিবারের বাকিরা পুলিশ এবং দমকলে খবর দেয়। দমকলকর্মীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসক দুই ভাইকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ মৃতদেহ দুটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

নবীর হকের ছেলে মনিরুল হক বলেন, “আমাদের নিজেদের বাথরুম পরিষ্কার করছিলেন কাকা। সেপটিক ট্যাঙ্কে গিয়ে কাকা অসুস্থ হয়ে যান। বাবা কাকাকে উদ্ধার করতে নামেন। তিনিও সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।“

কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহ দুটির ময়না তদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’’

এর আগে গত ২০ আগস্ট রবিবার জলপাইগুড়ি জেলার মাল ব্লকের তেসিমলায় সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে মৃত্যু হয় দুই সাফাইকর্মীর। নিহতদের নাম মহম্মদ শাহিদ (২০) ও আমিনুর ইসলাম (২৬)। এঁরা সম্পর্কে খুড়তুতো ভাই। সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারেরই কাজ করতেন এই দুজন। সেদিনও এক ব্যক্তির সেপটিক ট্যাঙ্কের শাটারিং খুলতে গিয়ে নিচে পড়ে যান দুই ভাই। দমকলকর্মীরা এসে দু’জনকে ওপরে তুললে দেখা যায় কিন্তু দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে ততক্ষণে।

গত ৩০ জুলাই ওড়িশার রঘুনাথপুরে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে মৃত্যু হয় বীরভূমের পাইকর থানার বাসিন্দা সফিকুল শেখ (২২) ও গোলসানুর শেখের (১৮)। ওড়িশায় সাফাইকর্মীর কাজ করতেন এই দুজন।

তার আগে ২২ জুলাই এই বীরভূমেরই খয়রাশোলে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে মৃত্যু হয় তিনজনের। নিহতরা হলেন সনাতন ধীবর (৪৯), স্বপন বাদ্যকর (৪৬) এবং অমৃত বাগদি (৩২)। তিনজনই দিনমজুরের কাজ করতেন। কিছু বাড়তি আয়ের জন্য বিকেলে সাফাইকর্মীর কাজ করতেন। সেদিনও বিকেলে স্থানীয় একজনের সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে প্রথমে স্বপন বাদ্যকর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে উদ্ধারে সনাতন ধীবর নামলে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর দুজনের সাড়াশব্দ না পেয়ে ভেতরে নামেন অমৃত। তিনজনকে আসতে না দেখে বাইরে থাকা এক যুবক আশেপাশের লোকদের খবর দেন। দমকল এসে দীর্ঘ কয়েকঘণ্টার চেষ্টার পর তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করে।

গত এপ্রিল মাসে নদীয়ার ভীমপুর থানার নতুন পাড়ায় সেপটিক ট্যাঙ্কে সেন্টারিং এর কাজ করতে নেমে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মৃতদের নাম সুমন বিশ্বাস, শুভেন্দু দে ও কালু দে।

ছবি প্রতীকী
Domestic Violence: গার্হস্থ্য হিংসা মামলায় ‘অবিলম্বে গ্রেফতারি’ নয়! ‘ঐতিহাসিক’ নির্দেশ আদালতের

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in