
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ (এ) ধারায় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনায় এবার থেকে আর দ্রুত এবং অপ্রয়োজনীয় গ্রেফতার করা যাবে না। সোমবার এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এবার থেকে এই মামলায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর গ্রেফতারির আগে অনুমতি নিতে হবে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের।
এই প্রসঙ্গে সোমবার বিবৃতি জারি করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল চৈতালি চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সেই বিবৃতি আপলোড করা হয়েছে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের অনলাইন ওয়েবসাইটেও।
ওই বিবৃতিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ (এ) ধারার মামলা নিয়ে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সমস্ত থানার পুলিশ আধিকারিকদের। বলা হয়েছে, এবার থেকে আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারির মতো চটজলদি কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে এই অপরাধ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়ের কথা উল্লেখ করে এইধরণের মামলায় তদন্তে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য প্রাপ্ত শাস্তি নিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যখন পুলিশ আধিকারিকরা ৪৯৮ (এ) ধারার অন্তর্গত কোনও মামলায় তদন্ত করবেন তখন সবার আগে তাঁদের ওই ধারার আওতায় জানানো অভিযোগের সত্যতা ও যোগ্যতা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি অভিযোগের যোগ্যতা প্রমাণিত হয়, তখন কোন কোন কারণের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া যায় তার একটি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের। তারপর ওই আধিকারিকদের সংশ্লিষ্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (CJM) কাছে প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়ে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করতে হবে। সবশেষে সিজিএম ওই অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া যাবে কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
কিন্তু তদন্তকারী আধিকারিকরা ওই ধারায় রুজু হওয়া অভিযোগের মধ্যে যদি যথেষ্ট যোগ্যতা খুঁজে না পান, সেক্ষেত্রে অভিযোগ জমা হওয়ার ২ দিনের মধ্যে ওই মামলায় কেন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এসপিকে এই বিষয়ে অবগত করতে হবে।
পাশাপাশি, ওই ২ দিনের মধ্যেই তদন্তকারী আধিকারিকদের অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও মিটিয়ে ফেলতে হবে। এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত জানিয়েছেন, “যেহেতু ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ধারায় অভিযোগ জমা হওয়ার পর অবিলম্বে গ্রেফতারির বিধান দেওয়া রয়েছে, তাই দীর্ঘদিন ধরে এই ধারার অনেক অপব্যবহার হয়েছে। কোনও সভ্য সমাজে বিচারের আগে শাস্তি হতে পারে না। আর তাই কলকাতা হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট সময়োপযোগী।”
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন