মুসলিম গণহত্যার ডাক - ব্যবস্থা নেবার দাবিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি ৭৬ শীর্ষ আইনজীবীর
ধর্মীয় সমাবেশ থেকে মুসলিম গণহত্যার ডাক দেওয়া হিন্দুত্ববাদী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানাকে চিঠি লিখলেন সুপ্রিম কোর্টের ৭৬ জন আইনজীবী। সম্প্রতি দিল্লি এবং হরিদ্বারে হওয়া দুটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে 'সাফাই অভিযান' শুরু করার ডাক দিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী নেতারা।
চিঠিতে নেতাদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়েরের অনুরোধ করেছেন আইনজীবীরা। প্রশান্ত ভূষণ, বৃন্দা গ্রোভার, সালমান খুরশিদ, দুষ্যন্ত দাভে সহ বিশিষ্ট আইনজীবীদের স্বাক্ষর সম্বলিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া এই বক্তৃতাগুলি কেবল নিছক ঘৃণাত্মক বক্তৃতা নয়, একটা গোটা সম্প্রদায়কে হত্যা করার জন্য খোলাখুলি আহ্বানের সমতুল্য। এই ধরণের বক্তৃতা শুধু আমাদের দেশের ঐক্য এবং অখন্ডতার জন্যই মারাত্মক হুমকি নয়, দেশের লক্ষ লক্ষ মুসলিম নাগরিকের জীবনকেও বিপন্ন করে।
চিঠিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তাই এই ধরণের ঘটনা বন্ধ করতে বিচারব্যবস্থার জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে একটি ধর্ম সংসদের আয়োজন করেন হিন্দুত্ববাদী নেতারা। সেখানে হিন্দু রক্ষা সেনা সংগঠনের সভাপতি স্বামী প্রবোধানন্দ গিরি বলেন, দেশের প্রত্যেক হিন্দু, রাজনীতিবিদ, পুলিশকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাফাই অভিযান শুরু করতে হবে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামীর ঘনিষ্ঠ প্রবোধানন্দ এর আগেও একাধিকবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক মন্তব্য করেছেন।
ধর্ম সংসদে সাধ্বী অন্নপূর্ণা, যিনি আগে পূজা শকুন পান্ডে নামের পরিচিত ছিলেন, তিনি বলেন, "আমাদের ১০০ এরকম সৈন্যের প্রয়োজন, যারা ২০ লাখ মুসলমানকে হত্যা করতে পারবেন। যদি আপনি তাদের শেষ করতে চান, তাহলে তাদের হত্যা করুন।"
স্বামী ধরমরাজ মহারাজ এই সমাবেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে গুলি করে হত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
সমাবেশে বক্তাদের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হন আন্তর্জাতিক টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। দেশে-বিদেশে নিন্দার মুখে পড়ে সমাবেশের চারদিন পর এফআইআর দায়ের করে হরিদ্বার পুলিশ, যেখানে মুসলমান থেকে সম্প্রতি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করা একজনের নাম দেওয়া হয় কেবল। এরপর আরও সমালোচনা শুরু হলে রবিবার সাধ্বী অন্নপূর্ণা এবং ধরমদাসের নাম ঢোকানো হয় এফআইআরে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি এই ঘটনায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন