একাকী ভিড়: সংস্কৃতি, ধর্ম ও রাজনীতির প্যালেস্টাইন - উপকথার কথোপকথন শেষে (শেষ পর্ব)

People's Reporter: কেন ফিলিস্তিনিরাই কেবলমাত্র খেসারৎ দিয়ে যাবে? এই প্রশ্ন ‘বিদ্বেষী’ প্রত্যুত্তরে অনুরণিত হয়। রণাঙ্গন রক্তে ভিজে যায়।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীগ্রাফিক্স - আকাশ

হিন্দুত্ববাদ ও জ়ায়নবাদ

গাজ়ায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। প্রতিদিন শতাধিক শিশুর পরিকল্পিত-মৃত্যু, মানব সভ্যতায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ইহুদি, মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক, কমিউনিস্ট সহ সকল মানবতাবাদী, এই নির্লজ্জ হত্যাকাণ্ডকে ধিক্কার জানাচ্ছেন। হাসপাতাল ঘিরে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখার রাষ্ট্রীয় মানসিকতাকে নিন্দা করছেন।

রাজনৈতিক পরিকল্পনায় ধর্মের তাসটিকে নিহত সেনার আবেগ চিহ্নে ট্রাম্প কার্ডে পরিণত করা হয়েছে। ইজ়রায়েলের মাটিতে সেই রাজনৈতিক কৌশল সাফল্য পেয়েছে। লিকুদ সরকারের নেতা নেতানিয়াহু তাঁর সেই বসতি পরিকল্পনাকে জাতিতন্ত্রে বাস্তবায়িত করেছেন।

জ়ায়নবাদী জাতীয়তাবাদের জিগির বজায় রাখার সেই পরিকল্পনায় নেতানিয়াহু সরকারের প্রথম কাজ হয়েছে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে এবং গাজ়ায় হানা দেওয়া। শত্রু বিবেচিত পড়শির প্রতি ঘৃণা প্রকাশের সেই রাজনীতিতে, মৃত্যু-শঙ্কার নীল-নকশা ভরা থেকেছে নিপুণতায়।

সেনাদল চলে সমরে। ত্রাসের উল্লাসে, হিল্লোলে খেলে বেড়ায় জাতিবাদ, বর্ণবাদ।

সেনা মৃত্যুর অনুভূতিকে রাজনৈতিক পুঁজিতে পরিণত করার কৌশলে তাই আজকের ভারত মহোৎসবে ইজ়রায়েলের সঙ্গী হয়। অখণ্ডতার অভীপ্সা কল্যাণমূলক কাজের মোড়কে রাজনৈতিক-সংস্কৃতিকে আগ্রাসী করে তোলে। সব ক্ষেত্রে, পৃথিবী জুড়ে।

রাজনীতির আগ্রাসী অভিমুখের স্বাভাবিকতায় হিন্দুত্ববাদ তাই জ়ায়নবাদের সমর্থক হয়ে ওঠে। পেগাসাস ঘরে ঢুকে পড়ে। গুপ্তচর বৃত্তির নতুন নতুন ফাঁদ সামরিক কৌশলের বিশ্বায়নকে ভুবনের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়। নজরদারির বিশ্ব-বিজয় ঘোষিত হয়।

প্যালেস্টাইন অঞ্চলের নারকীয় ঘটনা আমরা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছি, সেখানে আরব-বিদ্বেষের মুক্তিদাতা হামাস এবং জ়ায়নবাদী রাষ্ট্র ইজ়রায়েলের কৌশলী সন্ত্রাসে সাধারণ নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে। অবরোধ ও দখলদারিত্বের পরিণতিতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। অযৌক্তিকতাকে যুক্তিসিদ্ধ করার অপচেষ্টা গণমাধ্যমে জারি রাখতে হচ্ছে।

ঠিক তখনই আল-শিফায় আইসিইউ’র সব রোগীকেই মেরে ফেলার কাজে সফলতা আসে। সেই অবর্ণনীয় নৃশংসতার দৃশ্য, সারা পৃথিবী দেখেছে। আজও নতুন ঘটনায় দেখছে। গ্রেটা থুনবার্গকেও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফ্যাসিবাদের নতুন মুখোশে মুখ ঢাকছে জ়ায়নবাদ।  

বিদ্বেষী তকমার জ়ায়নবাদী ব্যাখ্যা

জ়ায়নবাদ নিজেকে ইহুদি-বিদ্বেষের সমাধান হিসেবে হাজির করে।

ইহুদি-বিদ্বেষ আদপে একটি ভুল শব্দ, যদিও তার বহুল ব্যবহার সুপ্রাচীন। ইউরোপে শব্দটি জন্ম নেওয়ার একটা অন্যতম প্রধান কারণ হল ইহুদিদের অত্যধিক জাতিগত স্বায়ত্তশাসন মেনে চলা। সাংস্কৃতিক পরিচয়েও তারা অন্যদের থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়। অপর হয়ে যায়।

আমরা-বোধের স্বায়ত্তশাসনে ইহুদি জাতিবোধ, গোষ্ঠীচেতনার আন্দোলনে জেগে থাকে। সামাজিক পরিসরে শক্তিশালী ইহুদি সাংস্কৃতিক-সমৃদ্ধি ঈর্ষার কারণ হয়। নব-উদ্ভাবনের সক্ষম-জ্যোতিতে ঘটা আর্থিক সাফল্য, সেটাকে জাহির করে।

সমাজের অভ্যন্তরে সর্বধর্মের সংহত সংযোগে ছেদ ঘটে। জাতি বৈচিত্র্যের পারস্পরিকতায় সেই খামতিকে অনিবার্য করে তোলে জাতিতন্ত্রের উন্নাসিকতা। এটি হল বিদ্বেষী মনোভাবের অন্যতম একটি উৎস। যীশুর মৃত্যুদণ্ড চাওয়া ইহুদিদের ইউরোপে প্রথম থেকেই ব্যাপক সন্দেহের চোখে দেখা হতো। ইতিহাসের ভুল রাজনৈতিক সম্পর্কে অপ্রীতিকর ঘটনার মাত্রা তখন থেকেই বৃদ্ধি পায়। ইহুদিবাদ শুচিতার উচ্চাসনে আসীন হয়ে ইসলামের মৃত্যু ঘন্টা বাজায়। সেটাই জেরুজালেমপন্থী মতাদর্শ।

স্বজাত্যবোধ ভণিতার অবগুণ্ঠন খুলে দেয়। জার্মান অপরাধবোধের খেসারৎ আদায়ের দাবি জ়ায়নবাদে জোরালো হয়ে ওঠে। নৈতিক মূল্যবোধের নিক্তিকে নতুন সংজ্ঞা জড়িয়ে ধরে। কে যে কার বিদ্বেষী তা বোঝার আগেই ঘটনা ঘটে যায়। বিদ্বেষীর বিষ থাকে তার ঘৃণাভরা আচরণে, যা সেখানে বৈষম্য থেকে শুরু করে নিপীড়ন, বর্জন, বহিষ্কার এবং গণহত্যা পর্যন্ত বিস্তৃত।

জ়ায়নবাদী মতাদর্শে ইহুদি জাগরণ সাইবর্গ নজরদারিতে সুরক্ষার প্রশ্নটিকে সামনে আনে। ফিলিস্তিনিরা খেসারৎ দিয়ে যায়। ইহুদি-বিদ্বেষ ক্রমে একটি ‘ইহুদিভীতি’ শব্দে প্রতিষ্ঠাপিত হয়, ঠিক যেমন ‘ইসলামভীতি’ মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিবাদের জন্য একটি ভুল কিন্তু ব্যাপকভাবে স্বীকৃত শব্দ।

জ়ায়নবাদ ‘ইসলামভীতি’ জাগিয়ে রাখার পরিসরকে পোক্ত করে।

ইহুদি প্রশ্নে বিতণ্ডাবাদী পাশ্চাত্য দর্শন

কেন ফিলিস্তিনিরাই কেবলমাত্র খেসারৎ দিয়ে যাবে? এই প্রশ্ন ‘বিদ্বেষী’ প্রত্যুত্তরে অনুরণিত হয়। রণাঙ্গন রক্তে ভিজে যায়।

তেমনই এক বিরুদ্ধতায় বিতণ্ডাবাদীদের হাজিরা দেখা যায়। পশ্চিমী দর্শনে সেও হল এক জনগণের দর্শন, যা শুধু বস্তুবাদী নয়। সেখানে ধর্ম, ভাষা, জাতি, কিচ্ছুটি নেই। আছে মানবতা, মানুষের অনুভূতি। হিংসার বিরুদ্ধে, শোষণের প্রতিরোধে, মানুষের জয়যাত্রা।

সেই দর্শনে ইহুদি সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সমাধান খোঁজা হয়েছে। মানবতাবাদ এবং সহনশীলতার আখ্যানে তা প্রতিফলিত। দার্শনিক হার্বার্ট মার্কুজ়া তো ইজ়রায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেও, স্বাধীনতার সংজ্ঞা রচনায় জ়ায়নবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন।

ইহুদি ভাববাদী দার্শনিক ফ্রাঞ্জ ওপেনহেইমার কল্পরাজ্যকে সত্য মেনেও বিজ্ঞান, কল্পকাহিনী এবং জাতিগত অবস্থানের আন্তঃসংযোগে ইহুদি আনন্দলোককে দেখছেন। আশকেনজি ইহুদি পরিচয়ে ইজ়রায়েল অ্যাকাডেমিক আলোচনায় তিনি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।  

ইহুদি হওয়ার সুবাদে জনবরেণ্য আর এক দার্শনিক কার্ল ম্যানহেইম তো ঘোর বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক গঠন হিসেবে বুদ্ধিজীবীদের উত্থান এবং পতনের আলোকে ম্যানহেইম ইহুদিবাদের মতাদর্শকে অনুসন্ধান করেন এবং সেটাকে কাল্পনিক আখ্যা দেওয়ার দোষে দুষ্ট হন। একজন ইহুদি হয়েও এমন ইহুদি-বিদ্বেষী ধারণার অবতারণা জর্জ সিমেলও করেছেন। তিনি ইহুদিবাদকে একটি ঐতিহাসিক, দার্শনিক এবং আদর্শিক ত্রুটি হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন।

তৃতীয় প্রজাতন্ত্রের জোরালো সমর্থক ইমাইল দ্যুরকাঁ তাঁর সমাজতান্ত্রিক ভাবনায় ইহুদি-বিদ্বেষের কারণটিকে অস্বাভাবিক বলে ব্যাখ্যা দেন, যা জ়ায়নবাদীরা জোরালভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। বিপরীতে জ়ায়নবাদ দাবি করে যে ইহুদি-বিদ্বেষ হল আধুনিক সমাজের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। জ়ায়নবাদে তাই ইহুদীদের সামাজিক মুক্তি ঘটে ধর্মবোধে। যখন বস্তুবাদী বিতণ্ডাবাদে ইহুদি ধর্ম থেকে সমাজের মুক্তিতে ইহুদি প্রশ্ন আলোচিত হয়। কার্ল মার্কস ইহুদিদেরকে উত্সাহী পুঁজিবাদী বলতেন। একজন ইহুদিকে তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকায় তিনি বিবেচনা করেন।

জ়ায়নবাদীরা মার্কসকে ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিহীন মনোভাবের একজন ‘বিশ্বাসঘাতক ইহুদি-বিদ্বেষী’ ঘোষণা করেন।

বসতি উপনিবেশে বিদ্বেষের জীবনধারা

ট্রটস্কি ইহুদিবাদকে ‘একটি রক্তাক্ত ফাঁদ’ হিসেবে নিন্দা করেছিলেন। সেই ফাঁদের বিশ্বায়ন ঘটে বসতি উপনিবেশে। উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে একটি বিশেষ শাসন কাঠামোয় বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক পর্যায়টি কোথাও কোথাও বিকশিত হয়।

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বের ইতিহাসে ব্রিটিশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইহুদীবাদী মিত্রতা ইজ়রায়েলের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়। সেই বসতি উপনিবেশে, বিদ্বেষের রাজনৈতিক-সংস্কৃতিতে শিশুর সামাজিকীকরণ সম্পূর্ণ হয়। সে জেহাদি কিম্বা জ়ায়নবাদী, যে পরিবার থেকেই উঠে আসুক না কেন, সে হত্যার উল্লাসে মাততে শিখে যায়।

গণহত্যা এবং ঔপনিবেশিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা নিপীড়নের একটা ব্যবস্থাজাত কাঠামোয় সংজ্ঞায়িত হয় বসতি উপনিবেশ। স্থানচ্যুতি সেখানে একটি অনিবার্য ফল হয়ে ওঠে। লক্ষ্য হিসেবে এই প্রক্রিয়ায় একটি অঞ্চলে স্বজাতির জনসংখ্যাকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলা হয়। ইজ়রায়েলে ইহুদি জনসংখ্যার সেই প্রতিস্থাপন-হারটিকে আমরা জমির রেকর্ড পরিবর্তনের তথ্যে দেখতে পারি, যা আমাদের অজানা নয়।

বসতি উপনিবেশে বিদ্বেষের জীবনধারা লালিত হয়। যেমনটি ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। শ্বেতাঙ্গ শাসন নৃশংস বর্ণবৈষম্যে আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান প্রজন্মকে আঘাত করেছিল। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা, অথবা কেবলমাত্র ইজ়রায়েল নয়, কেনিয়া এবং আর্জেন্টিনায় ঘটে চলা জাতিগত সংঘাতও সেই বসতি উপনিবেশের ফল।       

বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডগুলির মধ্যে আরও রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া। আজকের নয়া-ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে, যুদ্ধের অর্থনীতিতে, প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণে এবং ঝুঁকির জীবনধারায়, জ়ায়নবাদ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার সন্ধানের অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জাতিতন্ত্রে গোটা বিশ্ব মোহগ্রস্ত হলে বসতি উপনিবেশের গণতন্ত্র ইজ়রায়েলে নিরীক্ষিত হয়।

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্যান-আরববাদের ভয় লঘু করার সামরিক কৌশল আয়ত্তাধীন হতে থাকে।

অনন্য ইজ়রায়েল

ইজ়রায়েল অনন্য। আপন সুরক্ষার স্বার্থে শিশু-হন্তা পরিচয়ে নয়, বসতি উপনিবেশের তাত্ত্বিক পরিসরে সে অনন্য। অন্য একটা জাতিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় শেষ করার কাজে সে অনন্য নয়, নজরদারির অভিনবত্বে সে অনন্য।

সে এতদিন এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জল, আবাদযোগ্য জমি এবং কৃষিজ ফসলে তার দখল বাড়িয়েছে। এখন সে জ্বালানি স্বাধীনতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ফেলতে চলেছে। ইজ়রায়েল উল্লেখযোগ্য তেল উৎপাদনকারী দেশ না হওয়ার তকমা ঘুচিয়ে ফেলতে চলেছে।       

গত দশ বছর ধরে ইজ়রায়েল প্যালেস্টাইনের প্রাকৃতিক সম্পদকে খুঁজে চলেছে। প্রকৃতির প্রাচুর্য অনুসন্ধানের প্রতিক্ষণে বিভক্ত সমকাল। বসতি স্থাপনের প্রাথমিক পর্বে সে ধর্মবোধের ঐক্যে জোর দিয়েছিল। ইহুদিদের ঘরবাড়ি তাতে বেড়েছে। পরিচয় রাজনীতিতে তাদের বসতি উপনিবেশ রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। জাতিতন্ত্রের সেই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, রাষ্ট্র পরিচয়ে পিছনে চলে যায়। সামনে আসে নিরাপত্তার প্রশ্ন। নিরাপত্তার নামে তল্লাশি তিনটি কাজকে সহজ করে।

এই অবস্থানেও ইজ়রায়েল অনন্য। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সে নজরদারি চালাতে পারে। আরব-বিদ্বেষে, গণতন্ত্রের নামে, সে আজ সহজেই একজন ফিলিস্তিনিকে কোণঠাসা করতে পারে। তল্লাশি কাজটাকে সহজ করে। বৈষম্যের ফাটল ধরাতে একদিন তারা ব্রিটিশের সাহায্য পেয়েছিল, আজ ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশের সঙ্গে মার্কিন মদত তল্লাশির নামে গণহত্যার কাজটাকে বৈধতা দিচ্ছে। তাই গাজ়ায় নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চাইলেও জো বাইডেন চান না।

তল্লাশির নামে তৃতীয় যে কাজটা সহজ হয়, তা হল প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান। এই প্রাপ্তি ইজ়রায়েলকে বসতি উপনিবেশের অনন্য রূপ-লাভে সাহায্য করে।

আগ্রাসনের সেই নতুন গড়ন, আজ শুধু, গোলান হাইটসের দক্ষিণ অংশে তেলের ঐতিহাসিক অনুসন্ধানমূলক খননেই প্রকাশ পায় না, জ্বালানি স্বাধীনতার ঘোষণায় গাজ়ায় বিদ্যমান তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ভাণ্ডার দখলে ইজ়রায়েল সেটা সাম্রাজ্যবাদী ঘরানায় ঘোষণা দেয়।

কথোপকথনের শেষে

আপনার কি মনে হয় ইজ়রায়েল বেঁচে না থাকলে, জ়ায়নবাদ জেগে না থাকলে, পশ্চিমা উদারনীতির নৈতিক স্থাপত্যের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে? অপরাধীরা যা করেছে তা মেনে নিয়েই ফিলিস্তিনি প্রজন্মকে বেঁচে থাকার কৌশল শিখতে হবে? খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অনিশ্চয়তাতেই কি সাধারণ ফিলিস্তিনির অকাল জীবন কেটে যাবে? হামাস হিংসার প্রতিপক্ষে রাষ্ট্রীয় কায়দায় আরও হিংসা সংগঠিত করাটাই কি অঞ্চলটির জন্য নির্ধারিত থাকবে, নাকি শান্তির পরিবেশ সামরিক সমাধানেই সম্ভবপর হবে?

আপনি সামরিক শাসনের কৌশলী সমাধানকে আপাতভাবে বেছে নিতেই পারেন। সাময়িক সুরাহার একটা পন্থা বিবেচনাতেই আপনি সেটা বেছেছেন। যদিও আপনি মানেন যে এই পন্থা দীর্ঘদিন কার্যকরী থাকে না। তাই আপনি ইজ়রায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয়কেই সমানাধিকারে এবং সমমর্যাদায় পাশাপাশি বসবাসের আহ্বান জানাতে চান। মানবতার স্বার্থে, জীবিতদের স্বার্থে এবং মৃতদের নামে আপনি ফিলিস্তিন ও ইজ়রায়েলের যুদ্ধে বিরতি চান।

কিন্তু, নয়া-ফ্যাসিবাদীরা যুদ্ধবিরতির কথা মুখেই আনেন না।

তাই আমরা কেউই জানি না যে ইজ়রায়েল নামের জ়ায়নবাদী ভূ-রাজনীতিতে সেই রক্তাক্ত ফাঁদ রক্ষার লড়াই নতুন দিকে মোড় নেবে কি না। যদিও আমরা সকলেই মানি যে পরাধীনতার শেকলে বাঁধা জীবনকে আমরা সকলেই ভাঙতে চাই।

ছবি প্রতীকী
একাকী ভিড় : সংস্কৃতি, ধর্ম ও রাজনীতির প্যালেস্টাইন - ইজ়রায়েল ও তার জায়নবাদী ভূ-রাজনীতি (১ম পর্ব)
ছবি প্রতীকী
একাকী ভিড়: প্যালেস্টাইন - বিশ্ব-ক্ষমতা কাঠামো ও এশীয় জ়ায়নবাদী শক্তিকেন্দ্র (পর্ব ২)
ছবি প্রতীকী
একাকী ভিড়: সংস্কৃতি-ধর্ম-রাজনীতির প্যালেস্টাইন - প্রতিরক্ষার নামে পরিচয় রাজনীতির ষড়যন্ত্র (পর্ব ৩)

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in