
দু'দশক আগে ভাঙন ধরেছিল ঠাকরে পরিবারে। ২০০৫ সালে শিবসেনা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বালাসাহেব ঠাকরের ভাইপো রাজ ঠাকরে। এরপর ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)। তারপর আর একসাথে দেখা যায়নি এই দু'জনকে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে রাজের এক মন্তব্যে ফের ঠাকরে পরিবারে মিলনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর এরপরেই মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। বিশেষ দু'ভাগে বিভক্ত শিবসেনার মধ্যে একনাথ শিন্ধের শিবসেনা এই সম্ভাবনায় বিপদের ইঙ্গিত দেখছে।
ঠাকরে পরিবারের ফাটল জোড়া লাগার সম্ভাবনা সামনে আসতেই প্রমাদ গুণছে শিবসেনার একনাথ শিন্ধে গোষ্ঠী। আইনত যাদের কাছে এখন শিবসেনা নাম এবং প্রতীক - দুইই আছে। ঠাকরে পরিবার একত্রিত হবার সম্ভাবনা সামনে আসতেই শিবসেনার মুখপাত্র এবং সাংসদ নরেশ মাসকে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, এভাবেই রাজ ঠাকরে আলোচনার কেন্দ্রে আসতে চাইছেন।
ওই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, শিবসেনা (ইউবিটি)-র কাছে কোনও জনপ্রিয় নেতৃত্ব নেই। সেই কারণেই তারা এখন রাজ ঠাকরের সঙ্গে ফাটল মেরামত করতে চাইছে। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় শিবসেনা (ইউবিটি)-র খারাপ ফলাফলের পর ওরা এখন বাঁচার রাস্তা খুঁজছে।
শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে ‘বর্তমান দুর্যোধন’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি কখনও রাজ ঠাকরেকে উঠতে দেবেন না। যখন বালাসাহেব ঠাকরে চেয়েছিলেন রাজ ঠাকরেকে দায়িত্ব দিতে তখনও উদ্ধব ঠাকরে আপত্তি জানিয়েছিলেন। রাজ ঠাকরেকে শিবসেনা থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। এখন নিজেদের স্বার্থে রাজ-এর সঙ্গে ফাটল মেরামত করতে চাইছেন উদ্ধব।
বিতর্কের সূত্রপাত দিনকয়েক আগে। অভিনেতা মহেশ মঞ্জরেকারের পডকাস্টে গিয়েছিলেন এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে। সেখানে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ মহারাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক প্রমাণিত হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের ভাষাগত এবং সংস্কৃতির স্বার্থ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার উর্ধ্বে। রাজ ঠাকরের এই মন্তব্যের পর থেকে মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জল্পনা।
রাজ ঠাকরে বলেন, “আমার আর উদ্ধবের বিবাদের থেকে মহারাষ্ট্র অনেক বড়। যার কারণে মহারাষ্ট্র এবং মারাঠি জনগণকে অনেক বড় মূল্য দিতে হচ্ছে। একসাথে আসাটা কঠিন নয়, এটা ইচ্ছার বিষয়। এটি কেবলমাত্র আমার ইচ্ছা বা স্বার্থপরতার বিষয় নয়। আমাদের আরও অনেক বড় কিছু ভাবতে হবে। সমস্ত মারাঠি জনগণকে একত্রিত হয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত”।
অন্যদিকে, এর পরেই এক সমাবেশে উদ্ধব ঠাকরে রাজ ঠাকরের দাবি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। শিবসেনা (ইউবিটি)-এর প্রধান বলেন, “আমি ছোটখাটো বিবাদকে দূরে সরিয়ে রাখতে প্রস্তুত। আমি সমস্ত মারাঠি জনগণকে মহারাষ্ট্রের স্বার্থে একত্রিত হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি। তবে একটা শর্ত রয়েছে। যখন আমরা সংসদে তুলে ধরেছিলাম যে শিল্প গুজরাটে স্থানান্তরিত হচ্ছে, সেই সময় যদি একত্রিত হতাম, তাহলে আমরা এমন একটি সরকার গঠন করতে পারতাম যা মহারাষ্ট্রের জন্য কাজ করে”।
তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি মহারাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, আমি তাদের স্বাগত জানাব না, তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবো না বা তাদের সাথে বসব না। এটি প্রথমে পরিষ্কার হোক এবং তারপরে মহারাষ্ট্রের জন্য একসাথে কাজ করা যাক”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন