
কম্পিউটার কেনা তো দূর, শেখার সামর্থ্যও ছিল না। রাত কাটতো খোলা আকাশের নীচে। সবদিন দু'বেলা ভরপেট খাবারও জুটতো না। সেখান থেকে আজ তিনি মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ডিজাইন বিভাগের ম্যানেজার, মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিক। শাহীনা আত্তারওয়ালার বাস্তব জীবনের কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের 'ব্যাড বয় বিলিওয়েনার্স: ইন্ডিয়া' ওয়েবসিরিজের একটি দৃশ্য দেখে ট্যুইটারে নিজের জীবনের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন শাহীনা আত্তারওয়ালা। মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়। ওয়েবসিরিজের ওই দৃশ্যে মুম্বাইয়ের একটি বস্তি এলাকার ছবি তুলে ধরা হয়েছিল, যেখানে শাহীনার পুরোনো বাড়ি রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে আপ্লুত হয়ে ট্যুইটারে নিজের জীবনকাহিনী বলেছেন তিনি।
ওই দৃশ্যের স্ক্রিনশট শেয়ার করে শাহীনা লেখেন, "নেটফ্লিক্সের সিরিজ 'ব্যাড বয় বিলিওয়েনার্স - ইন্ডিয়া'-তে মুম্বাইয়ের একটি বস্তির বার্ড-আই ভিউ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি কাটিয়েছি। ছবিতে যে বাড়িগুলো দেখতে পাচ্ছেন তার মধ্যে একটি বাড়ি আমাদের। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এখন এখানকার পাবলিক টয়লেটগুলো অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে, আগে এরকম ছিল না।"
শাহীনা জানিয়েছেন, বান্দ্রা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে দারগা বস্তিতে থাকতেন তিনি। রাতে রাস্তায় ঘুমাতেন। তাঁর বাবা তেল ফেরি করতেন। স্কুলে প্রথম কম্পিউটার দেখার পরই এই জিনিসটার প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। মেয়ের আগ্রহ দেখে তাঁর বাবা টাকা ধার করে নিকটবর্তী কম্পিউটার শেখার ক্লাসে ভর্তি করান তাঁকে।
দুপুরে খাওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হতো শাহীনাকে। না খেয়ে কম্পিউটার কেনার জন্য সেই টাকা জমাতে শুরু করেন তিনি। দারিদ্র্যের সাথে এইভাবে লড়াই করতে করতে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম-এ স্নাতক হন শাহীনা। এরপর NIIT থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন। এরপর বিভিন্ন সংস্থার পণ্যের ডিজাইনের কাজ করতে করতে ২০২১ সালে মাইক্রোসফটে চাকরি পান তিনি।
শাহীনা জানিয়েছেন, বস্তির জীবন খুব কঠিন ছিল। যৌন হয়রানি, লিঙ্গ বৈষম্য সহ একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই জেদই তাঁকে আজ এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। নিজের জীবনের এই সাফল্যে বাবাকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাইক্রোসফটের প্রোগ্রাম ডিজাইন বিভাগের ম্যানেজার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন