
সংসদের বাদল অধিবেশন (Monsoon Session 2025) ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া অধিবেশন, প্রথম তিন দিনেই কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বিরোধী ও সরকারি পক্ষের টানাপোড়েনের জেরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলিই উপেক্ষিত হচ্ছে। আর এই অচলাবস্থার জন্য ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যে টাকা আসে সাধারণ মানুষের করের টাকা থেকে। জানা যাচ্ছে কমপক্ষে ২৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এই অচলাবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি বিতর্কিত বিষয়। প্রথমত, বিহারে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (Special Intensive Revision/SIR) নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ। বিরোধীরা জানায়, সরকার এর মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে বিরোধী সমর্থকদের বাদ দিতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, ‘অপারেশন সিঁদুর’। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভারতের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে সংসদে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার দাবি উঠেছে।
এই দুটি ইস্যুতে বিরোধীরা জোরালো আলোচনার আহ্বান জানালেও, তা নিয়ে সরকারি পক্ষের প্রতিক্রিয়া এবং সংসদ পরিচালনায় অমিলের কারণে প্রতিদিনই কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
২০১২ সালে প্রাক্তন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনসালের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, সংসদের এক মিনিট পরিচালনার খরচ প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা। লোকসভায় ১.২৫ লক্ষ এবং রাজ্যসভার ১.২৫ লক্ষ টাকা। যদিও এখন এই খরচ আরও বেড়েছে বলে অনুমান করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আপডেটেড পরিসংখ্যানের অভাবে এখনও সেই পুরনো হিসেবই ধরতে হচ্ছে।
প্রতিদিন সংসদের উভয় কক্ষে ছয় ঘণ্টা করে কার্যকাল ধরা হয় (দুপুরের বিরতির সময় বাদ দিয়ে)। সেই হিসেবে, তিন দিনে প্রতিটি কক্ষে মোট ১৮ ঘণ্টা বা ১০৮০ মিনিট কাজ হওয়ার কথা ছিল। অথচ পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যসভা মাত্র ৪.৪ ঘণ্টা (২৬৪ মিনিট) এবং লোকসভা মাত্র ৫৪ মিনিট কাজ করেছে। অর্থাৎ রাজ্যসভায় ৮১৬ মিনিট এবং লোকসভায় ১০২৬ মিনিট কাজের সময় নষ্ট হয়েছে।
এই হিসাবে রাজ্যসভায় প্রায় ১০.২ কোটি টাকা এবং লোকসভায় প্রায় ১২.৮৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “বিরোধী দলের নেতারা সকলেই এখানে উপস্থিত আছেন। ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আলোচনা হবে। কিন্তু, একাধিক বিষয় একসঙ্গে তোলার চেষ্টা করে, প্ল্যাকার্ড এবং প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা সংসদ অচল করে দিয়েছেন।”
বিরোধীদের দাবি, সরকার সচেতনভাবেই সংসদে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করছে না। কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “বিহারে ৫২ লক্ষ মানুষের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছি। এটা কি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা নয়? সরকার চাইছে সংসদ অচল রাখতে, যাতে প্রশ্নের মুখোমুখি না হতে হয়।”