যোশীমঠের মতো পরিণতি হতে পারে দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সম্প্রতি, শুধুমাত্র দার্জিলিং শহরে ১৩৯ টি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করেছে দার্জিলিং পৌরসভা। যে বাড়ি/হোটেলগুলি পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্টের ১১.৫ মিটার উচ্চতার সীমারেখা ছাপিয়ে গেছে।
দার্জিলিং
দার্জিলিং ফাইল ছবি

বেআইনি নির্মাণ, ভয়াবহ ভূমি ধসের জেরে আজ বিলুপ্তের পথে উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠ! সেই একই পরিস্থিতি নেমে আসতে পারে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্সিয়ং-এ। বেআইনি নির্মাণের জেরে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ী অঞ্চল।

পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট অনুসারে, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে অ-স্থাবর পরিকাঠামো নির্মাণের উচ্চতা ১১.৫ মিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু, সেই নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। সম্প্রতি, শুধুমাত্র দার্জিলিং শহরে ১৩৯ টি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করেছে দার্জিলিং পৌরসভা। যে বাড়ি/হোটেলগুলি ১১.৫ মিটার উচ্চতার সীমারেখা ছাপিয়ে গেছে।

আর, এই বেআইনি নির্মাণের বিপদ সম্পর্কে কলকাতার বিশিষ্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ্ত মিত্র বলেন, 'বিল্ডিং-এর উচ্চতা যত বেশি হবে, মাটির উপর চাপ তত বেশি হবে।' তিনি বলেন, 'পাহাড়ের মাটির গঠন অত্যন্ত আলগা। ভূমিকম্প বা বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এর ফলে মাটির গঠনকে আরও আলগা হয়ে যায়।'

ইঞ্জিনিয়ার মিত্র জানান, 'পাহাড়ে কোনও নির্মাণের আগে এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন নির্মাণটির লোড কত হত পারে। আর, মাটির গঠন অনুযায়ী তা নিরাপদ কিনা। কিন্তু, ট্র্যাজেডি যে, নির্মাণকারী ব্যক্তি/সংস্থা ও প্রশাসন-রাজনীতিবিদদের যোগসাজশের কারণে এই উচ্চতার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করা হয়।'

পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধ্বসের আরেকটি কারণের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন মিত্র। আর তা হল- 'কাঠের নির্মাণের ছেড়ে কংক্রিটের নির্মাণের দিকে ধাবিত হওয়া।' তিনি বলেন, 'কাঠের নির্মাণগুলি পাহাড়ের জন্য আদর্শ। যেহেতু মাটির উপর এই ধরনের নির্মাণের ভার কংক্রিটের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু, আমি লক্ষ্য করছি যে, শপিং মল এবং হোটেলের মতো রিয়েল এস্টেটের উন্নয়নগুলি মূলত কংক্রিট- ভিত্তিক। এই বিষয়ের সুরাহা প্রয়োজন।'

সম্প্রতি, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই)-র এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কালিম্পং, কার্সিয়ং এবং দার্জিলিং অঞ্চলের প্রায় ১৭ শতাংশ এলাকা ভারী ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর, ৪০ শতাংশ এলাকা মাঝারি ভূমিধ্বস এবং ৪৩ শতাংশ এলাকা মৃদু ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

ভারী ভূমিধ্বস প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তিনধারিয়া, গিদ্দাপাহাড়, গয়াবাড়ি, পাগলা ঝোরা এবং দারাগাঁও-কে। এদিকে, এই সমস্ত জায়গায় গত কয়েক বছরে পর্যটন শিল্পের চাপ বেড়েছে। এবং এর ফলে রিয়েল এস্টেট এবং ভারী যানবাহনের চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে।

ভূগোলের অধ্যাপক চন্দ্রলেখা সেন বলেন, এই অঞ্চলে টেকটোনিক প্লেটের চলাচলের কারণে বর্ষাকালে প্রবল বর্ষণের সাথে সাথে এলাকার মাটির নির্মাণ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে হালকা থেকে ভারী ভূমিধস হয়।

সেন বলেন, 'এগুলি প্রকৃতির খেলা, এগুলি আসলে মানুষের হাতে নেই। তবে আমাদের হাতে যা আছে, তা হল সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। যাতে, সমস্যা বাড়তে না পারে। অবশ্যই, অবৈধ নির্মাণ এবং ভারী যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়। তাই, পাহাড়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।' 

আসলে সম্প্রতি দার্জিলিং মিউনিসিপ্যালিটিতে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে। আগের ক্ষমতাসীন দল হামরো পার্টির নিয়ন্ত্রিত বোর্ড এই অবৈধ নির্মাণগুলি ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তবে, পাহাড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর, হামরো পার্টির ছয়জন নির্বাচিত কাউন্সিলর বিরোধী অনিত থাপার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাতে (বিজিপিএম) যোগ দেওয়ায় বর্তমানে দার্জিলিং মিউনিসিপ্যালিটিতে ক্ষমতায় রয়েছে বিজিপিএম জোট। ফলে অবৈধ নির্মাণগুলির ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

-With IANS Inputs

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in