

সুপ্রিম কোর্ট ইলেক্টোরাল বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে জানিয়েছিল। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ইলেক্টোরাল বন্ড নিষিদ্ধ হয়েছে। যদিও প্রায় একই পদ্ধতিতে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরেই বড়ো অঙ্কের টাকা ঢুকেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তহবিলে। কর্পোরেট ডোনেশনের অঙ্কে এগিয়ে বিজেপি। জানা গেছে ৯ টি ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে বিগত আর্থিক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পেয়েছে ৩,৮১১.৩৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৮২ শতাংশ অর্থই গেছে বিজেপির তহবিলে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই ধরণের ৯টি ট্রাষ্ট মারফৎ বিজেপি পেয়েছে ৩,১১২.৫০ কোটি টাকা। কংগ্রেস পেয়েছে ২৯৮.৭৭ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশ। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তহবিলে ঢুকেছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে বিভিন্ন ট্রাস্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলে ঢুকেছিল ১,২১৮ কোটি টাকা। সম্প্রতি ট্রাষ্টগুলির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India – ECI) কাছে এই সংক্রান্ত তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে।
যে ৯টি ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি টাকা পেয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে আছে প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট। এঁদের মাধ্যমে উঠেছে মোট ২,৬৬৮.৪৬ কোটি টাকা। এই ট্রাষ্ট ভারতী এন্টারপ্রাইজ বা ভারতী এয়ারটেল-এর পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। এই সংস্থার মাধ্যমে টাকা দিয়েছে জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার, মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, অরবিন্দ ফার্মা, টরেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস প্রভৃতি সংস্থা।
প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাষ্টের মাধ্যমে টাকা উঠেছে ২,৬৬৮.৬৪ কোটি। প্রোগ্রেসিভ ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে টাকা উঠেছে ৯১৪.৯৭ কোটি, দ্য নিউ ডেমোক্রেটিক ইলেক্টোরাল ফান্ডের মাধ্যমে ১৬০ কোটি, হারমোনি ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে ৩৫.৬৫ কোটি, ট্রাম্প ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে ২৫ কোটি, সমাজ ইলেক্টোরাল ফান্ডের মাধ্যমে ৬ কোটি, জনপ্রগতি ইলেক্টোরাল ফান্ডের মাধ্যমে ১.০২ কোটি, জনকল্যাণ ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৯ লক্ষ, ইঞ্জিগারটিগ ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে ৭.৭৫ লক্ষ টাকা।
তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে বিভিন্ন নির্বাচনী ট্রাষ্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃত ১৯টি ট্রাস্টের মধ্যে ১৩টি তাদের হিসেব কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। যার মধ্যে ৯টি ট্রাষ্টের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনুদান জমা পড়েছে। জনহিত, পরিবর্তন, জয়হিন্দ এবং জয়ভারত—এই চারটি ট্রাস্ট কোনো অনুদান পাওয়ার কথা জানায়নি।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইলেক্টোরাল বন্ড নিষিদ্ধ হবার আগে পর্যন্ত বিজেপি মোট অনুদান পেয়েছিল ৩,৯৬৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে বন্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ছিল ১,৬৮৬ কোটি এবং ট্রাষ্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৫৬ কোটি। যদিও ইলেক্টোরাল বন্ডের অবলুপ্তির পরেও অনুদান প্রাপকদের তালিকায় এখনও শীর্ষে বিজেপি।
প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাষ্ট থেকে বিজেপি পেয়েছে ২,১৮০.৭১ কোটি টাকা, কংগ্রেস পেয়েছে ২১.৬৩ কোটি টাকা, তৃণমূল পেয়েছে ৯২ কোটি টাকা এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস পেয়েছে ৮৮ কোটি টাকা।
টাটা গ্রুপের দ্য প্রোগ্রেসিভ ইলেক্টোরাল ট্রাষ্টের মাধ্যমেও রাজনৈতিক দলগুলি টাকা পেয়েছে। এছাড়াও মাহিন্দ্রা গ্রুপের দ্য নিউ ডেমোক্রেটিক ইলেক্টোরাল ফান্ড, দ্য ট্রাম্প ইলেক্টোরাল ট্রাষ্ট, দ্য জনপ্রগতি ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট, জনকল্যাণ ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট-এর মাধ্যমেও টাকা উঠেছে। এই ট্রাষ্ট থেকে বিজেপি পেয়েছে ৭৫৭.৬ কোটি টাকা, কংগ্রেস পেয়েছে ৭৭.৩ কোটি টাকা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল পেয়েছে ১০ কোটি টাকা।
মাহিন্দ্রা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতার নিউ ডেমোক্রেটিক ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট ১৬০ কোটির মধ্যে ১৫০ কোটি দিয়েছে বিজেপিকে এবং কংগ্রেস ও শিবসেনা (ইউবিটি)-কে দিয়েছে ৫ কোটি করে।
উল্লেখযোগ্যভাবে ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে প্রাপ্ত অনুদানের অনুপাতে ট্রাষ্ট থেকে প্রাপ্ত অনুদান অনেকটাই কমেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বিআরএস, বিজেডি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে।
নির্বাচনী ট্রাষ্টের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্পোরেট এবং ব্যক্তি আংশিক গোপনীয়তার সাথে কোনও রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করতে পারে। নির্বাচনী বন্ড নিষিদ্ধ হবার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেবার জন্য বহু কর্পোরেটই ট্রাষ্টকে বেছে নিয়েছে। কারণ এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ আর্থিক বছরের তথ্য অনুসারে, বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছিল প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট (Prudent Electoral Trust)। বিজেপির দলীয় তহবিলে মোট ৩৩৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দান করেছে এই সংস্থা। এছাড়া, এবি জেনারেল ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট (AB General Electoral Trust)-র কাছ থেকে ১০ কোটি ও সমাজ ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট (Samaj Electoral Trust)-র কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা পেয়েছে বিজেপি।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন