
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার জেগে উঠল ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নির্জন ব্যারেন দ্বীপে ১৩ ও ২০ সেপ্টেম্বর - অর্থাৎ সাত দিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে দু’বার লাভা ও ধোঁয়া লক্ষ্য করা গেছে। এই অগ্ন্যুৎপাতগুলোকে আপাতত ছোটখাটো ধরা হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলোকে হালকাভাবে দেখলে ভুল হবে। কারণ, দ্বীপটির অবস্থান এমন এক সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলে, যেখানে যেকোনও নড়াচড়া বড় ঘটনার পূর্বাভাস হতে পারে।
ব্যারেন দ্বীপে প্রথম অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৭৮৭ সালে। এরপর দীর্ঘ ২০৪ বছর নিস্তব্ধ থেকে ১৯৯১ সালে আগ্নেয়গিরিটি প্রবল শক্তিতে জেগে ওঠে। তারপর থেকে ২০০৫, ২০১৭ ও ২০২২ সালে ছোট-বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে এখানে। এবছরের সেপ্টেম্বরের উদ্গীরণ সেই ধারারই অংশ। ফলে ভূতত্ত্ববিদদের মতে, “অগ্ন্যুৎপাতের ফ্রিকোয়েন্সি বেড়েছে” বলেই ধরে নেওয়া যাচ্ছে।
২০ সেপ্টেম্বরের অগ্ন্যুৎপাতের মাত্র দু’দিন আগে ওই অঞ্চলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের প্রধান ও পি মিশ্র জানিয়েছেন, ব্যারেন দ্বীপের নিচে প্রায় ১৮–২০ কিলোমিটার গভীরে থাকা ম্যাগমা চেম্বারে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিই লাভার অকাল নির্গমনের জন্য দায়ী। তিনি বলেন, “ভূমিকম্পের কম্পনেই ম্যাগমা চেম্বারে চাপ তৈরি হয়ে আগ্নেয়গিরিটি উদ্গীরণ করেছে।”
ব্যারেন দ্বীপ পশ্চিম আন্দামান ফল্টে অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় প্লেট সুন্দা প্লেটের নিচে সরে যায়। এই অঞ্চলটি টেকটনিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয়। ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামির পেছনেও এই একই ভূমিকম্পীয় ফল্টের ভূমিকা ছিল। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ব্যারেন দ্বীপের প্রতিটি অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে ভূমিকম্পের যোগসূত্র খুঁজে দেখা জরুরি।
ব্যারেন দ্বীপে মানুষের বসতি নেই, শুধু সামান্য উদ্ভিদরাজি ও বন্যপ্রাণী রয়েছে। দ্বীপের আকার প্রায় ৩.২ কিলোমিটার, সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরাসরি মানববসতির জন্য ঝুঁকি না থাকলেও, এর কার্যকলাপ অবহেলার মতো নয়। কারণ, এখানকার অগ্ন্যুৎপাত নতুন লাভার আস্তরণ তৈরি করে দ্বীপের ভূগোল পাল্টে দিতে পারে এবং আশপাশের সাগরপথের জন্য বিপদ তৈরি করতে পারে।
Geological Survey of India (GSI) এবং জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্র স্যাটেলাইট নজরদারির মাধ্যমে ব্যারেন দ্বীপকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষুদ্র ভূকম্পনও এটি বড়সড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস হতে পারে। তাই, বসতিহীন হলেও ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরির প্রতিটি অগ্ন্যুৎপাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন