
আজ থেকে ২৭ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার এক কোণে ভাড়া করা গ্যারাজে শুরু হয়েছিল যাত্রা। সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে সূচনা করা প্রতিষ্ঠানটি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি শক্তি। শুধু তথ্য খোঁজা নয়—গুগল এখন আমাদের চলাফেরা, যোগাযোগ, বিনোদন, এমনকি শেখার ধরনও পাল্টে দিয়েছে। এর বিবর্তন কেবল একটি কোম্পানির সাফল্যের গল্প নয়, বরং আধুনিক ডিজিটাল সভ্যতার ক্রমবিকাশের প্রতিচ্ছবি।
ব্যাকরাব: একাডেমিক গবেষণা থেকে বাণিজ্যিক স্বপ্ন
১৯৯৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পিএইচডি ছাত্র—ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন ‘BackRub’ নামে একটি গবেষণা প্রকল্প চালু করেছিলেন। ওয়েবসাইটের লিঙ্ক বিশ্লেষণ করে গুরুত্ব নির্ধারণ করাই ছিল ‘BackRub’-এর কাজ। তখনও তাঁরা ভাবেননি, কয়েক বছরের মধ্যেই এটি গোটা বিশ্বের তথ্য খোঁজার নির্ভরযোগ্য সার্চ ইঞ্জিন হয়ে উঠবে।
গ্যারাজের অফিস ও প্রথম বিনিয়োগ
‘BackRub’-এরই পরে নাম হয় গুগল। ১৯৯৮ সালে গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানি হিসেবে গড়ে ওঠে। শুরুর দিকে তাঁরা মাসে ১,৭০০ ডলারের বিনিময়ে সুসান ওজসিকির গ্যারাজ ভাড়া নেন গুগলের প্রথম প্রকৃত কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার জন্য। একই বছর সান মাইক্রোসিস্টেমসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ডি বেখটলশাইমের ১০০,০০০ ডলারের বিনিয়োগ কোম্পানিটিকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়। বলা যায়, এটাই গুগলের ভবিষ্যৎ যাত্রার পথ খুলে দিয়েছিল।
দ্রুত বিস্তার ও পালো অল্টো অধ্যায়
ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় গ্যারাজে জায়গা কম পড়ে। ১৯৯৯ সালের গোড়ায় গুগল স্থানান্তরিত হয় পালো অল্টোর একটি বড় অফিসে। এখানেই শুরু হয় সম্প্রসারণ। সার্চ অ্যালগরিদমের উন্নয়ন, নতুন প্রতিভা নিয়োগ, এবং বিজ্ঞাপনভিত্তিক আয়ের মডেল তৈরি—সব মিলিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই গুগল সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করে।
সার্চ থেকে সুপার অ্যাপ ইকোসিস্টেম
গুগলের সাফল্য শুধু সার্চেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০০৪ সালে আসে জিমেল, যা ইমেল ব্যবহারের ধারা বদলে দেয়। ২০০৫ সালে অ্যান্ড্রয়েড কিনে নিয়ে মোবাইল জগতের চেহারা পাল্টে দেয় গুগল। ২০০৬ সালে ইউটিউব অধিগ্রহণ করে বিনোদনের দুনিয়াকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে। পরে গুগল ম্যাপস, গুগল ফটোস, ড্রাইভ, ট্রান্সলেট—সব মিলিয়ে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।
অ্যালফাবেট: বহুমুখী সাম্রাজ্যের কাঠামো
২০১৫ সালে কোম্পানিকে পুনর্গঠন করে ‘Alphabet Inc’ নামের ছাতার নিচে আনা হয় বিভিন্ন প্রকল্প। এতে মূল ব্যবসা (সার্চ, বিজ্ঞাপন, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড) একদিকে থাকল, অন্যদিকে AI, Waymo (স্বয়ংচালিত গাড়ি), Verily (হেলথ টেক) ইত্যাদি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ। এই কাঠামো শুধু ব্যবস্থাপনা সহজ করেনি, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের পথও প্রশস্ত করেছে।
নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন সক্রিয় ব্যবস্থাপনা থেকে সরে দাঁড়ালেও বিশেষ শ্রেণির ভোটাধিকারের শেয়ার ধরে রেখেছেন। বর্তমানে সুন্দর পিচাই গুগল ও অ্যালফাবেট—দুটিরই সিইও। তাঁর নেতৃত্বে গুগল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন