এক নিগ্রহের ঘটনা এবং কিছু উত্তর না মেলা প্রশ্ন…

দার্জিলিং-এ দিলীপ ঘোষ ও অন্যান্যরা
দার্জিলিং-এ দিলীপ ঘোষ ও অন্যান্যরাছবি দিলীপ ঘোষের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত

গত পরশু থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে দেয়ালে একটা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই ভিডিও দেখা গেছে কিছু সংবাদমাধ্যমেও।

যে ভিডিওকে ভাইরাল বলা যেতেই পারে। খবরটা নিয়ে গেল গেল রব তুলেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ উল্লাসও প্রকাশ করে ফেলেছেন। কেউ বা ক্ষোভ জানিয়েছেন। বিতর্কিত ওই ভিডিওতে দেখা গেছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার সহ কিছু বিজেপি কর্মীকে, যারা নাকি দার্জিলিং পাহাড়ের কোনও এক অঞ্চলে কিছু মানুষের হাতে প্রহৃত হচ্ছেন।

কোনো রাজনৈতিক নেতা এবং বিধায়কের উপস্থিতিতে এই ধরণের নিগ্রহের ঘটনা ইদানীংকালে রাজ্যে যে একদমই ঘটেনি তা নয়।বরং মন্ত্রী বিধায়কদের সামনেই যুযুধান দুই গোষ্ঠীর বিবাদ দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে। যদিও প্রশাসনকে নাকের ডগায় রেখে ঘটা এধরনের ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা নিয়েই এবং এক্ষেত্রে একজন বিধায়ককে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তাও এককথায় বলা যায়।

অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বা প্রশাসনের ব্যর্থতার দিকে আঙ্গুল তোলার জন্য এই লেখা নয়। বরং ঘটনার দিকে চোখ রাখা যাক। একটু ভালো করে যদি ওই ভিডিওতে নজর দেওয়া যায় তাহলে পুরো ঘটনার সারবত্তা নিয়েই বহু প্রশ্ন উঠে আসবে। প্রশ্ন উঠবে এই কারণেই যে, ওই ঘটনার পরই সন্ধ্যেবেলাতেই রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের ‘রাজ্য সভাপতি আক্রান্ত’ এই অভিযোগ তুলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। যদিও খুব ভালো করে ওই ভিডিও বিশ্লেষণ করলে সেখানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের নিগৃহীত হবার কোনো ফুটেজই খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং দেখা যাবে একজন ব্যক্তিকে ঘিরেই মূল আক্রমণটা হয়েছে এবং পাশাপাশি আরও একজন ব্যক্তি অল্প প্রহৃত হয়েছেন।এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল – যারা নাকি দার্জিলিং-এ বিজেপির সভা বানচাল করতে দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়লো, তাঁরা শুধুমাত্র একজনকেই আক্রমণ করলো কেন? দিলীপ ঘোষ বা জয়প্রকাশ মজুমদারকে আক্রমণ করার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও আক্রমণকারীরা সে পথে হাঁটেনি। এইধরণের বিক্ষোভে যা খুবই অস্বাভাবিক। আসল ঘটনা তাহলে কী? সবটাই কি পূর্বপরিকল্পিত? নাকি অন্য কোনও বড় ঘটনা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা? তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ এই ঘটনার ঠিক একদিন আগেই তো বলেছিলেন তৃণমূলের উত্থানের পেছেন বিজেপির অবদানের কথা।

পাহাড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ অস্বাভাবিক এই কারণেও যে, পাহাড়ের সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুয়ালিয়া বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচিত। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা রীতিমতো দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে সংসদে পাঠিয়েছে এবং পাহাড়ের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যাতে বলা যাবে বিজেপি এবং মোর্চার সমঝোতাতে চিড় ধরেছে। বরং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বনধ তুলে নিয়েছেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং। গোটা পাহাড় জুড়ে যেখানে মোর্চার একাধিপত্য সেখানে বিজেপির ওপর আকস্মিক এই আক্রমণ তাহলে করলো কারা? কেনই বা করলো? এবং কেনই বা প্রশাসন চুপ করে রইলো। বিজেপির রাজ্য সভাপতি যে সভায় উপস্থিত আছেন সেই সভা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই হচ্ছিলো এমন তো হতে পারে না! এবং তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন যেখানে দার্জিলিঙের জেলাশাসিকা স্বয়ং জানাচ্ছেন দার্জিলিং-এ এখন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি না নেওয়াই শ্রেয়, সেখানে এক রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রশাসনিক অনুমতিই বা মেলে কী করে? তাহলে কী শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচি?

ঘটনাটা যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত তাহলে একরকম হতো। কিন্তু এই নিগ্রহের ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দিলেন স্বয়ং দিলীপ ঘোষ। গতকাল রাতেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। যে ছবির বিষয়বস্তু – উনি কিছু মানুষের সাথে দার্জিলিং-এর ম্যালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বসে আছেন। এক্ষেত্রে যে প্রশ্ন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, যে রাজ্য সভাপতিকে বিকেলবেলাতেই পাহাড়ের মানুষ নাকি ‘গো ব্যাক’ বলেছেন, নিগৃহীত করেছেন, তিনি অত নিশ্চিন্তে কীভাবে সেই পাহাড়েরই ম্যালে রাত্তিরবেলা সঙ্গী পরিবৃত হয়ে নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেন, ছবি তুললেন এবং পোস্ট করলেন?

না। বহু প্রশ্নের উত্তর যেমন কখনোই মেলে না, এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনোদিনই পাওয়া যাবে না। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেই যে প্রশ্ন আর কখনো উঠবে না সেরকমও নয়। কাজেই এক্ষেত্রেও রাজ্য বিজেপি সভাপতির নিগ্রহের ঘটনার সত্যতা নিয়ে মানুষের মনে একরাশ প্রশ্ন থেকেই গেলো…

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in