
২০২৪ সালের বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী মহিলাদের তালিকা প্রকাশ করল মার্কিন তথ্য এবং বাণিজ্যিক বিষয়ক পত্রিকা ফোবর্স। ফোবর্সের সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের তিন মহিলা। তাঁরা হলেন – কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, এইচসিএল টেকনোলজির চেয়ারপার্সন রোশনি নাদার মালহোত্রা এবং ব্যবসায়ী কিরণ মজুমদার শ্ব।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক তিন মহিলার কর্মকাণ্ড –
নির্মলা সীতারমন – তালিকায় ২৮ নম্বরে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ২০১৯ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে পূর্ণ সময়ের জন্য অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন নির্মলা। এরপর ২০২৪ সালেও লোকসভা নির্বাচনের পরে ফের তাঁর কাছেই থাকে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব। তাঁর আমলেই ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। সীতারমন জানিয়েছেন, ভারতের জিডিপি শীঘ্রই জাপান এবং জার্মানিকে ছাড়িয়ে যাবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিখ্যাত পত্রিকা। রাজনীতিতে আসার আগে সীতারামন আমেরিকার কৃষি প্রকৌশলী সমিতি এবং বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এমনকি তিনি ভারতের জাতীয় নারী কমিশনের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
রোশনি নাদার মালহোত্রা – ফোবর্সের তালিকার ৮১ তম স্থানে রয়েছেন রোশনি নাদার মালহোত্রা। রোশনি ভারতের অন্যতম প্রধান তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা সংস্থা এইচসিএল টেকনোলজির চেয়ারপার্সন এবং এইচসিএল কর্পোরেশনের সিইও পদে রয়েছেন রোশনি৷ ১৯৭৬ সালে তাঁর বাবা শিব নাদার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এইচসিএল-র কৌশলগত সিদ্ধান্তের (Strategic Decisions) তত্ত্বাবধান করেন তিনি। এছাড়া শিব নাদার ফাউন্ডেশনের একজন ট্রাস্টিও তিনি, যে সংগঠন মূলত রূপান্তরমূলক শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এবং ভারতের বেশ কিছু নামী ইন্সটিটিউটও তৈরি করেছে।
রোশনি নিজে ‘দ্য হ্যাবিট্যাটস ট্রাস্ট’ নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সংস্থাটি প্রাকৃতিক আবাসস্থল এবং আদিবাসী প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য কাজ করে। তিনি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কেলগ স্কুল অফ ম্যানেজম্যান্ট থেকে এমবিএ করেছেন।
কিরণ মজুমদার শ – ফোর্বস পাওয়ার উইমেন তালিকায় ৮২ তম স্থানে রয়েছেন ব্যবসায়ী কিরণ মজুমদার শ। তিনি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োকন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন। কিরণ বহুদিন ধরেই ধনীতম ভারতীয়দের তালিকায় থেকেছেন। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ধনীতম ভারতীয়দের মধ্যে ৯১ নম্বরে রয়েছেন তিনি।
কিরণ মজুমদার শ বায়োটেকনোলজিতে ট্রেলব্লেজার হিসাবে তাঁর স্থান অর্জন করেছেন। বছরের পর বছর ধরে বায়োকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক বাজারে বিস্তৃত হয়েছে এবং মালয়েশিয়ায় এশিয়ার বৃহত্তম ইনসুলিন উত্পাদনকারী কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিরণের বায়োকন বায়োলজিক্স ২০২২ সালে ৩.৩ বিলিয়ন ডলারে ভায়াট্রিসের বায়োসিমিলার ব্যবসার অধিগ্রহণ করেছে। জীবনের প্রথম দিকে ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন কিরণ। কিন্তু ভিন্ন পথ অনুসরণ করে ভারতের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা হিসাবে আবির্ভূত হন তিনি। প্রয়াত স্বামী জন শ-র ক্যান্সার গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০১৯ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭.৫ মিলিয়ন ডলার দান করেছিলেন তিনি। তাঁর কোম্পানি করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টগুলির জন্য অ্যান্টিবডি থেরাপিতেও সহযোগিতা করছে।
প্রত্যেক বছরই ১০০ জন মহিলার তালিকা প্রকাশ করে ফোবর্স। চলতি বছর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন। টানা দুবছর বিশ্বের প্রভাবশালী মহিলাদের তালিকায় শীর্ষস্থান পেলেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে। তৃতীয় স্থানে ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন