
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পাচ্ছেন তিন আমেরিকান বিজ্ঞানী। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের নাম ঘোষণা করল শিকাগোর রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। তাঁরা হলেন - জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরে এবং জন এম. মার্টিনিস। তাঁরা এই খেতাব পেয়েছেন এমন এক গবেষণার জন্য, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে 'চিপে দৃশ্যমান' করে তুলেছে। এটি ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটার, আল্ট্রা-সিকিউর কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং উন্নত সেন্সর প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
জন ক্লার্ক, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-তে অধ্যাপনা করেন, গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন। মিশেল ডেভোরে ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া এবং সান্টা বারবারার সঙ্গে যুক্ত। জন মার্টিনিসও সান্টা বারবারায় গবেষণা করছেন। তাঁরা ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১.০৪ কোটি টাকা) পুরস্কার ভাগাভাগি করবেন।
নোবেল কমিটির বক্তব্যে বলা হয়েছে, "তাঁরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং শক্তি কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।"
সহজ ভাষায়, কোয়ান্টাম মেকানিক্স হলো একটি শাস্ত্র যা পারমাণবিক ও উপ-পারমাণবিক কণাগুলির আচরণ বোঝায়। এর একটি পরিচিত ঘটনা হলো ‘টানেলিং’, যেখানে কণাগুলি এমন বাধা অতিক্রম করতে পারে যা সাধারণত অসম্ভব বলে মনে করা হয়। এই ধারণাটি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করেছে। তবে বড়, দৃশ্যমান সিস্টেমে এটি প্রমাণ করা আগে খুব কমই সম্ভব হয়।
তাঁদের তৈরি সার্কিটটি হাতে ধরার যোগ্য হলেও এটি একটি কোয়ান্টাম সিস্টেমের মতো আচরণ করে। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
১. কণাগুলি সার্কিটের ভেতরের বাধা অতিক্রম করতে পারে।
২. সার্কিটের শক্তি স্তরগুলো স্বতন্ত্র বা কোয়ান্টাইজড।
পদার্থবিদ্যায় নোবেল কমিটির চেয়ার ওলে এরিকসন বলেন, “এই আবিষ্কার কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ক্ষুদ্র থেকে বড় জগতে নিয়ে এসেছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স শুধু রহস্যময় নয়, এটি আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি।”
আজকের ডিজিটাল প্রযুক্তি অনেকাংশেই কোয়ান্টামের উপর নির্ভরশীল। কম্পিউটার চিপের ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টরও কোয়ান্টাম নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। তবে এই নতুন গবেষণা সেই সীমা আরও এগিয়ে নিয়েছে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে—যেখানে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ হবে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং নিরাপদ।
২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছিলেন জন জে. হপফিল্ড এবং জেফরি ই. হিন্টন, যাদের অবদান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। এ বছর তিনজনের কাজ কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনন্য অবদান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন