
মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখার প্রক্রিয়া নিয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কারের স্বীকৃতি পেলেন তিন বিজ্ঞানী। সোমবার সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে, ২০২৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে মার্কিন গবেষক মেরি ব্রাঙ্কো (Mary Brunkow), ফ্রেড র্যামসডেল (Fred Ramsdell) এবং জাপানি বিজ্ঞানী শিমন সাকাগুচি (Shimon Sakaguchi)-কে।
নোবেল অ্যাসেম্বলির বিবৃতি অনুযায়ী, তাঁদের গবেষণা “পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স” বা দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচন করেছে। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, “তাঁদের আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই গবেষণার ভিত্তিতেই ইমিউন সিস্টেম কীভাবে নিজের কোষকে ‘শত্রু’ না ভেবে সহনশীল থাকে, তা বোঝা সম্ভব হয়েছে।”
দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অজানা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু অনেক সময় সেই প্রতিরোধ ক্ষমতাই ভুলবশত নিজের কোষকে ‘শত্রু’ ভেবে আক্রমণ করে বসে — যাকে বলা হয় অটোইমিউন রোগ। সাকাগুচি, র্যামসডেল এবং ব্রাঙ্কোর গবেষণা এই জটিল প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মূল প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছে। তাঁদের কাজের ফলেই আজ বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন কীভাবে শরীরের কিছু বিশেষ কোষ এই ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
তিন বিজ্ঞানী যৌথভাবে ভাগ করে নেবেন নোবেল পুরষ্কারের মূল্য - ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, আগামী ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবসে স্টকহোমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে পদক ও সনদ তুলে দেবেন।
নোবেল পুরস্কার প্রথম প্রদান শুরু হয় ১৯০১ সালে, আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী। ডিনামাইটের উদ্ভাবক এবং শিল্পপতি নোবেল তাঁর বিপুল সম্পদ রেখে যান মানবকল্যাণে — বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনীতিতেও নোবেল পুরস্কার যুক্ত হয়, যা অর্থায়ন করে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিক্সব্যাঙ্ক।
নোবেলের ইতিহাসে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কার পেয়েছেন বহু কিংবদন্তি গবেষক — যেমন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, যিনি ১৯৪৫ সালে পেনিসিলিন আবিষ্কারের জন্য স্বীকৃতি পান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরস্কার পেয়েছেন কোভিড-১৯ টিকা আবিষ্কারে ভূমিকা রাখা বিজ্ঞানীরাও। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে, মার্কিন গবেষক ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুন পেয়েছিলেন মাইক্রোআরএনএ (microRNA) সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য, যা জীবিত কোষের বিকাশ ও কার্যকারিতা বোঝাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন