চুকনগরে গণহত্যা: বঙ্গ-বিজেপির রাজনৈতিক মিথ্যাচার

আজও ওই অঞ্চলের মাটি খুঁড়লে মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যায়। আজও ওই অঞ্চলের চাষী মাঠে লাঙ্গল দিলে অনেক সময়ই ফসলের সঙ্গে উঠে আসে শিশুর মাথার খুলি।
চুকনগর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
চুকনগর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভছবি - উইকিপিডিয়া
Published on

আজ ২০শে মে। ১৯৭১ সালের ঠিক আজকের দিনে অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার চুকনগরে কয়েক হাজার বাঙালিকে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করেছিল। ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ সেই দিন খুন হন বলে অনুমান করা হয়। আজও ওই অঞ্চলের মাটি খুঁড়লে মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যায়। আজও ওই অঞ্চলের চাষী মাঠে লাঙ্গল দিলে অনেক সময়ই ফসলের সঙ্গে উঠে আসে শিশুর মাথার খুলি। যারা খুলনা বেড়াতে যান তারা “চুকনগর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ” দেখতে ভোলেন না। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় এই স্মৃতিস্তম্ভ।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাহেব তাঁর “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” বইটিতে লিখছেন, “মানুষের যতগুলো অনুভূতি আছে তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে ভালোবাসা। আর এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালোবাসা সম্ভব তার মাঝে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হতে পারে শুধুমাত্র মাতৃভূমির জন্যে।” সত্যিই তো বাংলাদেশের মানুষ একবার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, আবার নতুন করে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁদের সেটা করতে হয়েছিল। পূর্ব-পাকিস্তানে সংঘটিত সেই লড়াই, জাতধর্ম নির্বিশেষে শহীদের রক্তে রাঙানো স্মৃতিতে আজও জেগে থাকে। স্বাধীনতার সেই লড়াই, বাঙালি আবার করে লড়েছিল। বাঙালির এই জাতীয়তাবাদী চেতনায় স্বাধীনতার যুদ্ধ গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক সাফল্য অর্জনের ইতিহাস।

পৃথিবীর মানচিত্রে “বাংলাদেশ” নামে একটা নতুন দেশ আত্মপ্রকাশ করার সেই ঘটনা আমরা জানি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। সেই রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী হায়নার দল হয়ে পশ্চিম থেকে এসে পূর্ব-পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অপারেশন সার্চলাইট নামে সেই রাতে ঢাকা শহরের বুকে তারা এক নারকীয় হত্যালীলা চালায়। সাধারণ নাগরিক থেকে ছাত্র, শিক্ষক, আমলা, কর্মচারীসহ বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে গুলি করে, অথবা কুপিয়ে তারা হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর সেই গণহত্যায় হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ ছিল না, বরং মুক্তিকামী বাঙালি মারাই সেই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল। সেই কারণেই পুলিশ ও ই.পি.আর বাহিনীর কর্মীদেরও তারা মেরে ফেলে। বাঙালিদের তৎকালীন জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি আগের বছরই সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন।

এই আক্রমণের কোন ঘটনাই প্রতিরোধহীন ছিল না। প্রতিরোধটা ছিল জনযুদ্ধের আদলে একটা গেরিলাযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের সলতে সাতচল্লিশের পর থেকেই পাকানো হয়। পরাধীনতার শেকল ভাঙতেই সেটা শুরু হয়। বাহান্নর ভাষা শহীদেরা হন পিলসুজ। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়, বাঙালিকে বর্বর সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সরকারের প্রতি সশস্ত্র প্রতিরোধে রাস্তায় নামায়। সত্তরের নির্বাচনের মুখে এক শীতসন্ধ্যায় প্রকাশ্য জনসভায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন। নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর ঘৃণ্য রাজনৈতিক কৌশলের বিরোধিতা করেন।

৭ই মার্চ শেখ মুজিব ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এই সংগ্রামকে “মুক্তির সংগ্রাম,” “স্বাধীনতার সংগ্রাম” বলে ঘোষণা দিলে গেরিলা কায়দায় সশস্ত্র প্রতিরোধ আরও জোরদার হয়। পার্বত্য চট্টগ্ৰামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটিকে ২৫ মার্চ রাতে দখল করে নেওয়া সম্ভব হয়। নেতৃত্ব দেন ৮ম ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপপ্রধান মেজর জিয়াউর রহমান। এই রেডিওতে পরের দিন শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম. এ. হান্নান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তির দীপশিখা জ্বলে ওঠে। ঘোষিত হয় বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ, যা প্রতিষ্ঠিত হয় একাত্তরের শেষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

সাতাশে মার্চ সকাল ১১টায় মেজর জিয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম সম্ভাবনা প্রকট হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কিন্তু পরের দিনই বাংলাদেশের মাটি থেকে উবে যায়নি। কারণ তখনও পাকিস্তান এই ভূখণ্ডের অধিকার ছাড়েনি। মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করাটাই পাকিস্তান বাহিনীর কাছে তখন একমাত্র কাজ। ফলে বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়েছে গণহত্যার রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড, যা মৌলবাদী চরিত্রের ছিল না। সেই পরিকল্পিত সাঁজোয়া বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান ঐ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে সেই দীর্ঘ পরিকল্পিত গণহত্যার পরিসমাপ্তি ঘটে। আমরা জানি যে একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পোল্যাণ্ডের প্রস্তাবকে “আত্মসমর্পণের দলিল” বলেছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো।

৩০শে মার্চ জাতিসংঘকে গণহত্যার বিষয়টিকে নজরদারিতে এনে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানানো হয়। তারপর পাকিস্তানকে সাহায্য করতে আমেরিকার এগিয়ে আসা, তাতে সোহরাওয়ার্দীর বিদেশনীতির সহায়ক ভূমিকা, অন্যদিকে ভারতসহ রাশিয়ার বাংলাদেশকে সমর্থন, পরিস্থিতিকে খুবই ঘোরালো করে তুলেছিল। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের কলকাতা হয়ে উঠেছিল কোথাও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার কেন্দ্রভূমি। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই তখন এই যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে কলকাতাকেই আশ্রয় হিসাবে নিরাপদ মনে করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথা বলা যায়। শেক্সপিয়ার সরণির ৮নম্বর বাড়িটি, যেটি আজ অরবিন্দ ভবন নামে পরিচিত, যেটি বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের মামার বাড়ি, এখানেই থাকতেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের একটা অংশ পরিচালিত হতো কলকাতা থেকে।

“একাত্তরের দিনগুলি” গ্রন্থে জাহানারা ইমাম লিখছেন যে কারফিউ অগ্রাহ্য করে আমরা মিছিল করতাম, স্লোগান দিতাম। ভাবতাম “সমস্ত দেশের ওপর কি মহা সর্বনাশের প্রলয় ঝড় নেমে এসেছে।” পরিকল্পনা করে তখন নিরস্ত্র বাঙালিকে প্রাণে মেরে ফেলার রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত গভীর হচ্ছে। ২৫শে মে-র পরেই এপ্রিলের ২ তারিখে ঘটে জিঞ্জিরা গণহত্যা। মে মাসের ৫ তারিখে ঘটে গোপালনগর গণহত্যা। এই মে মাসের কুড়ি তারিখেই ঘটে চুকনগর গণহত্যা। এই বড় বড় ঘটনাগুলোর বাইরে, বাংলাদেশ জুড়ে তখন চলছে পর্যায়ক্রমিক গণনিধন।

২৫ মার্চের “অপারেশন সার্চলাইট” ঢাকা শহরকে জনশূন্য করতে পারেনি। কিন্তু যাদের হত্যা করতে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হল, তাদের জন্য নতুন পরিকল্পনা এপ্রিলের ২ তারিখে জিঞ্জিরায় সংঘটিত হল। পঁচিশের রাতে যারা ঢাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দেয়, সেই সব সন্ত্রাসীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে জিঞ্জিরার গণহত্যা সংঘটিত হয়। ঢাকার সেই কালো রাতে পালিয়ে বাঁচা মানুষ সাঁতরে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে অন্য পাড়ে অবস্থিত জিঞ্জিরায় নিরাপদ আশ্রয় নেয়। হিন্দু প্রধান এই অঞ্চলে ২ এপ্রিল ভোর থেকে সেনা সমাবেশ ঘটতে থাকে এবং কেরানীগঞ্জকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে আক্রমণ হানা হয়। ভোর থেকে শুরু হয় সেই হত্যাকাণ্ড। সঙ্কল্পবদ্ধ মানুষের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে দুপুরের পরে সেটা বন্ধ হয়। হাজারের বেশী মানুষ তাতে নিহত হন। মৃত মানুষের সকলেই হিন্দু ছিলেন, এমন নয়।

নাটোরের বনলতাকে বাঙালি যেমন চেনে, নাটোরের গোপালপুরকেও বাঙালি তেমনই মনে রেখেছে। প্রেম, ভালোবাসাতেই তো বাঙালিত্ব। সেই বাঙালির সন্ত্রাসী চেহারা তখন পাকিস্তানী শাসক পূর্ব-বাংলার ভূখণ্ড জুড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে গণহত্যা। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, ভৈরব, রূপসার জলও বুড়িগঙ্গার মতো গাঢ় লাল হতে থাকে তখন দিনে দিনে। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতাকামী শ্রমিক শ্রেণীর ওপরও আক্রমণ নামিয়ে আনে উপনিবেশবাদী পাকিস্তান। নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর সদরে থাকা চিনিকল শ্রমিকেরা পাকিস্তান বাহিনীর নির্মমতা প্রতিরোধে সঙ্ঘবদ্ধ হন। রেল শ্রমিকেরাও সেই প্রতিরোধে সহযোগিতা করে। মার্চ থেকেই এই প্রতিরোধী কাজে শ্রমিকদের সঙ্গে এই অঞ্চলের সাঁওতাল জনসম্প্রদায়ের মানুষও ছিলেন। তাদের শতাধিক সদস্য আগেই পাকিস্তান বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। ৫ মে গোপালপুর সদরের সেই চিনিকলে কর্মরত শ্রমিকদের বন্দী করে কলের ভিতরে থাকা পুকুরটির সামনে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারা হয়। সাধারণ তথ্যেই জানা যায় যে গুলিবিদ্ধ ২০০ জন বন্দির মাঝে মাত্র চারজন পরে বেঁচে যান। তাঁরা হলেন আবদুল জলিল শিকদার, ইমাদ উদ্দিন, আবুল হোসেইন, খরশেদ আলম এবং ইঞ্জিল সর্দার। মৃত্যুর তালিকায় হিন্দু, মুসলিম, আদিবাসী –সব সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। আসলে তাঁরা ছিলেন শ্রমিক।

এই মে মাসের ১৫ থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগী প্রতিরোধী মোহড়া শুরু হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চল আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক ৫ দিনের মাথায় পাকিস্তানী বাহিনী খুলনা ও বাঘেরহাট অঞ্চল আক্রমণ করে। একাত্তরের ২০শে মে, আজকের দিনে, ঘটনাটা ঘটে। এই অঞ্চল থেকে বত্রিশ কিলোমিটার পশ্চিমে ভদ্রা নদীর তীরে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সাধারণ নাগরিকদের। যাদের একটা বড় অংশ হিন্দু। তাঁদের মধ্যে অনেকেই তখন ভারতে পালিয়ে আসার জন্য চেষ্টায় আছেন। পাতখোলা ও চুকনগর বাজারে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। চার ঘন্টার বেশী সময় ধরে চালানো গোলাগুলিতে দশ হাজারের বেশী মানুষ মারা যায়। মুনতাসির মামুন বাংলাদেশ চর্চায় বলেন যে খুন হওয়া মানুষের একটা বড় অংশ হিন্দু।

এই সকল গণহত্যার নেপথ্যে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসন পুবে বহাল রাখার মরিয়া চেষ্টা। তাই নিধনকারী বাহিনী শুধুমাত্র সনাতনী হিন্দুদের ধরে ধরে মারছিল, এমনটি নয়। তাদের কাছে বিচার্য ছিল ব্যক্তি কোন পক্ষের। পাকিস্তান না বাংলাদেশ, কোন পক্ষ? যদি পাকিস্তান হও, অস্ত্র ধরো। আর বাংলাদেশ চাইলে গুলি খেয়ে মরো। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ কিম্বা উপজাতি মানুষ আসল বিবেচ্য বিষয় ছিল না। তাদের লড়াইটা ছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালি সেনার বিরুদ্ধে।

পশ্চিম পাকিস্তান বিরোধী সকল মুক্তিকামী মানুষকে তাই নির্বিচারে হত্যা করাটাই ছিল বাহিনীর পৈশাচিক আনন্দ প্রকাশের ভঙ্গিমা। সেই বর্বর হানাদার থেকে হিন্দু সহ সকল ধর্মের নারীদের রক্ষার কৌশল গ্রহণ করেছিলেন মুসলিম নারী মুক্তিযোদ্ধারা। মিনারা বেগম ঝুনুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নারী-বাহিনীর কথা আমরা জানি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন এবং একটা মহিলা গেরিলা নারী বাহিনী গড়ে তোলেন যাদের কাজ ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাত থেকে নারী ও শিশুদের রক্ষা করা।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা গেলেন। বাহান্নর সেই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই একাত্তরে স্বাধীনতার পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটেছে বাংলাদেশের জীবনে। এক কথায় বাঙালির জীবনে। শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউররা যে পথের সূচনা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, মুন্সি আব্দুর রউফও সেই মুক্তির লক্ষ্যে মানুষকে সচেতন, সংঘবদ্ধ করার কাজে তাঁদের অবদান জুগিয়েছেন। এই দীর্ঘ সশস্ত্র লড়াইয়ের পথে শুধু প্রতিরোধীদের নয়, প্রাণ গিয়েছে সহস্র সাধারণ মানুষের। তাঁদের সকলের অবদানেই বাংলাদেশের সেই মুক্তি। সেই সাফল্যের ধারা থেকে শুধুমাত্র একটা ঘটনাকে বিকৃত করছে বঙ্গ-বিজেপি ও আরএসএস।

সনাতনী হিন্দুদের সুরক্ষায় সেদিন হিন্দু মহাসভার ভূমিকার থেকেও তীব্রতর হচ্ছে আজকের রাজনৈতিক স্বর। এই ফাঁকা হিন্দুত্ববাদী অপকৌশল এখানে সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান চাইছে। লেখা হচ্ছে, “খুলনার চুকনগরে পাকিস্তানী হানাদার বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ে একযোগে দশ হাজার হিন্দু সনাতনীদের হত্যা করেছিল। পৃথিবীতে একদিনে এতবড় পৈশাচিক গণহত্যা কখনও হয়নি।” এই কথায় যে সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা তারা দিতে চাইছেন, তা শুধু বাঙালির সাফল্যের ইতিহাসকে কলুষিত করে না, সেটা বাঙালি জীবনধারার ক্ষেত্রেও হানিকারক হয়ে ওঠে।

চুকনগর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
Ukraine Crisis: ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কি বিশ্ব ব্যবস্থায় নতুন ক্ষমতা শৃংখলার ইঙ্গিত দিচ্ছে?

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in