DA Case: বকেয়া ডিএ মেটাতে সুপ্রিম কোর্টে আরও ছ'মাস সময় চাইল রাজ্য! নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি

People's Reporter: রাজ্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা কেন্দ্রের মতো উচ্চ হারে ডিএ দিতে না পারলেও, রাজ্যের কর্মচারীরা ছুটির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা পান। এই সুবিধাগুলি মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে তাঁদের রক্ষা করে"।
সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি, সংগৃহীত
Published on

রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মেটানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আরও ছ'মাস সময় চাইল রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, শীর্ষ আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানিয়েছে রাজ্য। রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ সরকারি আদালতের তহবিলে জমা দিতে প্রস্তুত তারা। এমনকি কেন তারা ডিএ দিতে পারছে না, সেটারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আগামী আগষ্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ বকেয়া রয়েছে। সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। গত ১৬ মে শুনানিতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, ১০ বছরে যে ডিএ বাকি আছে তার ২৫ শতাংশ পরের ছ'সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে। ২৭ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু শুক্রবারের মধ্যে রাজ্য সরকার ডিএ নিয়ে কোনও ঘোষণা করেনি। আদালতের নির্দেশ মেনে কর্মীদের ডিএ দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য।

কেন ডিএ দিতে পারছে না সরকার? এদিন রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, রাজ্যের লক্ষ লক্ষ কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ দিতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বর্তমানে রাজ্যের কাছে এত পরিমাণ অর্থ নেই। ডিএ দিতে গেলে ঋণ নিতে হবে সরকারকে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ। এছাড়া, আরও জানানো হয়েছে, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, এটা ঐচ্ছিক বিষয়। তাই কেন্দ্রের হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয় রাজ্য সরকার।

রাজ্য আরও জানিয়েছে, রাজ্যের পক্ষ থেকে আরওপিএ ২০০৯ চালু করা হয়েছে। যার নিয়মানুযায়ী, রাজ্য নিজস্ব হারে ডিএ দেবে কর্মচারীদের। কেন্দ্রের নিয়মানুযায়ী নয়। এছাড়া, কেন্দ্রের মতো রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামো নেই। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে (১০০ দিনের কাজ, জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা) অনুদান কমিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে চাপ পড়ছে রাজ্যের উপর। এছাড়া জিএসটি সংক্রান্ত বকেয়াও কেন্দ্র এখনও দেয়নি, যার পরিমাণ প্রায় ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা।

রাজ্যের আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা কেন্দ্রের মতো উচ্চ হারে ডিএ দিতে না পারলেও, রাজ্যের কর্মচারীরা ছুটির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা পান। এই সুবিধাগুলি মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে তাঁদের রক্ষা করে"।

এদিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ–র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। তাছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে ডিএ-র অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই পরিস্থিতিতে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ দিতে গেলে প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যার ফলে বেহাল হবে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা। বর্তমানে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ডিএ পান ১৮ শতাংশ। ২০২৫-২৬-এর বাজেটে ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪ থেকে ১৮ করেছে রাজ্য সরকার।

এই প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ তো দিলই না, উল্টে সুপ্রিম কোর্টে সময় চেয়ে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সরকার কি তা হলে আইন, আদালত কিছুই মানে না?’’

অন্যদিকে, মূল মামলাকারী কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ‍্য সরকার এই পদক্ষেপ করতে পারে বলে আমরা আগাম অনুমান করেই বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরে মুখ‍্যসচিবকে একটি নোটিস পাঠিয়েছি। আমরা যে আগামী দিনে রাজ‍্য সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করব, সে কথা রাজ‍্য সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

এই নিয়ে আইনজীবী তথা সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্য সরকার কর্মচারীদের প্রাপ্য টাকা দেবে না। সেই টাকা আদালতে জমা দেওয়ার কথা বলেছে। কর্মচারীদের প্রতি এতটাই অনাস্থা সরকারের। সরকারি কর্মচারীদের যদি আত্মসম্মান বোধ থাকে, তাদের উচিত সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দেউলিয়া সরকারের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করা"।

তিনি আরও বলেন, "এই সরকার শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে দেউলিয়া শুধু নয়, প্রশাসনিক চিন্তার দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। মহার্ঘভাতা রাজ্যের কর্মচারীদের আইনি অধিকার। সরকারের কোনও অনুদান প্রকল্প নয়। আর এতদিন ধরে আদালতে লড়াই করছেন, সরকার জানতো যে কোনও সময় বকেয়া মহার্ঘভাতা দিতে হবে। সরকারের উচিত ছিল টাকার সংস্থান করে রাখার"।

সুপ্রিম কোর্ট
কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের প্রতিবাদ - কসবা থানায় SFI-DYFI-এর বিক্ষোভে ধুন্ধুমার

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in