
দুর্গাপুজোর আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। রবিবারই মহালয়া। তার আগে বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে দামোদর নদীর জলস্তর। যা সামাল দিতে ডিভিসি বাড়তি জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই কমবেশি জল ছাড়ছিল ডিভিসি, কিন্তু নিম্নচাপের কারণে ঝাড়খণ্ডে টানা ভারী বৃষ্টির ফলে নদী অঞ্চলের জলাধারগুলি পূর্ণ হওয়ায় প্রশাসন অনেক বেশি জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে বৃহস্পতিবার ৪১ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। শুক্রবার তা বাড়িয়ে ৪২ হাজার ৫০০ কিউসেকে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মাইথনের জলাধার থেকে ১৭ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ২৫ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসি জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টির কারণে এই দুই জলাধার পূর্ণ, তাই বাড়তি জল ছাড়তে হচ্ছে। ডিভিসি-র এই ঘোষণায় জেরে ঘুম উড়েছে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায়। যার মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি।
দামোদরের জলস্তর বর্তমানে পূর্ণ এবং ডিভিসির বাড়তি জল ছাড়ার ফলে নদী উপচে প্লাবিত হতে পারে। মহালয়ার দিনে হাজার হাজার মানুষ নদীতে তর্পণ করতে যান। অতীতেও এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য ঘটনা, এক সময় রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের দাদা অসীম ঘটক মহালয়ার দিন দামোদরে তর্পণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। তাই এ বছর প্রশাসন আগে থেকেই সতর্ক।
আসানসোলের মহকুমা প্রশাসক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মহালয়ার তর্পণ নিয়ে ইতিমধ্যেই পুরপ্রশাসন এবং বিডিওদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া নদীর ঘাটগুলির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে জল বেশি বা বিপদজনক এলাকার ঘাটে কেউ নামতে পারবে না। আগে থেকে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে এবং তর্পণের সময় চলবে মাইকিং।
আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সতর্কতার জন্য যা যা দরকার, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন করছে। ঘাটগুলিতে উন্নত পরিকাঠামো রয়েছে।”
গত জুন-জুলাই মাসে ডিভিসি হাজার হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল। সেই সময় টানা বৃষ্টির কারণে বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান ও হুগলির মতো জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ডিভিসির জল ছাড়ার কারণে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছিলেন যে ডিভিসি না-জানিয়ে জল ছেড়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে নতুন করে নিম্নচাপ তৈরির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হবে আগামীতে। এই পরিস্থিতিতে জলস্তর আরও বাড়তে পারে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন