"গাড়ি নিবি, না গাঁজার কেস খাবি?" - অনুব্রতর হুমকির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বীরভূমের দুই ব্যবসায়ী

অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রবীর মণ্ডল এবং অরূপ ভট্টাচার্য। তাঁরা দুজনেই বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের নারায়ণঘাঁটি এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, "টাকাও গেছে। গাড়িও গেছে। কাজও গেছে।"
অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রবীর মণ্ডল এবং অরূপ ভট্টাচার্য
অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রবীর মণ্ডল এবং অরূপ ভট্টাচার্যগ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

গোরু পাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর এবার একে একে মুখ খুলছেন বীরভূমের মানুষজন। সেই সুযোগেই সাংবাদিকদের সামনে অনুব্রতর বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক মন্তব্য করলেন দুই ব্যবসায়ী। তাঁরা দুজনেই বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের নারায়ণঘাঁটি এলাকার বাসিন্দা।

অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখ খোলা দুই ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডল এবং অরূপ ভট্টাচার্যর অভিযোগ, "ময়ূরাক্ষী সংস্কারের কাজ পাওয়ার জন্য অনুব্রতকে দিয়েছিলাম পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা। সঙ্গে পঞ্চাশ লক্ষের বেশি মূল্যের এসইউভি গাড়ি।" কিন্তু তার পরিণাম উল্লেখ করে যথেষ্ট হতাশার সাথে দুই ব্যবসায়ী জানান, "টাকাও গেছে। গাড়িও গেছে। কাজও গেছে। ব্যাঙ্কের দেনার দায় মাথায় চেপেছে।"

মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বীরভূমের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার হুমকিতে স্বভাবতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডল। অনুব্রত তাঁর ৫০ লক্ষ টাকার এসইউভি গাড়ি হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। সাংবাদিকদের সামনে প্রবীর বাবু জানান, ৫ কোটি টাকা ও ৫০ লক্ষেরও বেশি দামী গাড়িটি ফেরত দেওয়ার কথা বলায় অনুব্রত তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, "গাড়ি নিবি, না গাঁজার কেস খাবি?" এরপর আর কোনওভাবেই টাকা ও গাড়ি ফেরত দেওয়ার কথা বলতে পারেননি ওই দুই ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে, দুই ব্যবসায়ী অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরই প্রকাশ্যে এসেছে গোরু, বালি, কয়লা পাচারের অভিযোগ। যাতে নাম উঠেছে অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনেরও। ব্যবসায়ী অরূপ বিশ্বাসের স্পষ্ট অভিযোগ, "মোট টাকা খেপে খেপে দিয়েছি। দেড় কোটি দিয়েছি অনুব্রতর হাতে। বাকিটা নিয়েছে সায়গল হোসেন।"

কিন্তু এত টাকা, গাড়ি দেওয়ার পরেও ব্যবসা করতে পারলেন না কেন দুই ব্যবসায়ী? প্রবীর মণ্ডল ও অরূপ ভট্টাচার্যের কথায়, "অন্য লোক ঢুকে সেটিং করে নিয়েছে অনুব্রতর সাথে। তাই ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েও আমরা বাদ হয়ে গিয়েছি।"

সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে ময়ূরাক্ষী নদীর নাব্যতা বাড়ানোর নামে চলত লুঠের কারবার। নদীচর থেকে বালি তুলে দিনের পর দিন পাচার করা হত কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। নদীর নাব্যতা বাড়াতে নদী সংস্ককারের জন্য বরাত দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা বিপুল পরিমাণ টাকা পেত সরকারি কোষাগার থেকে।

এ প্রসঙ্গে দুই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, "শুধু অনুব্রত নয়, সরকারি দপ্তরের নানা মহলেও পৌঁছাতে হয়েছিল ভাগ। খরচ হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।" তাঁদের আরও অভিযোগ, সেই সময় অর্থাৎ ২০১৮ সালে একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। যাতে বলা ছিল, নদী সংস্কারের জন্য সরকার থেকে যে টাকা দেওয়া হবে তা ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিতে হবে প্রভাবশালী মহলে। আর বালি বিক্রির টাকা দিতে হবে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে।

পাশাপাশি, বালি কারবারিরাই অভিযোগ করছেন যে, প্রশাসনের একাংশের হস্তক্ষেপেই চলত এই কারবার। এমনকি লুঠের এই গোটা পরিকল্পনা চাপা পড়েছে তাঁদের সৌজন্যেই।

অনুব্রতর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রবীর মণ্ডল এবং অরূপ ভট্টাচার্য
'কেষ্টা বেটাই চোর!' - আমূলের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছাতে অনুব্রত-প্রসঙ্গ? রসিকতায় মজলো নেটদুনিয়া

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in