‘শিরদাঁড়া বিক্রি নেই’ - শোকজ লেটার পেয়ে গর্বিত ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা

ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ পাঠাচ্ছে শিক্ষা দফতর। যা নিয়ে, ভয় পাওয়ার পরিবর্তে – সরকারের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।
শোকজ লেটার হাতে শিক্ষকরা
শোকজ লেটার হাতে শিক্ষকরাছবি - সংগৃহীত

১০ মার্চ, ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। এতে ভয় পাচ্ছেন না আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। উল্টে, শোকজ লেটার নিয়ে আনন্দ- উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তাঁরা। অনেকে আবার শোকজ লেটার-সহ নিজেদের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। এই ঘটনা এ রাজ্যে প্রথম।   

বকেয়া ডিএ, শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগ-সহ একাধিক দাবিতে- গত ১০ মার্চ, ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সরকারী কর্মীদের সঙ্গে সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষকেরা। সেই কারণে, ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ পাঠাচ্ছে শিক্ষা দফতর। যা নিয়ে, ভয় পাওয়ার পরিবর্তে – সরকারের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।

ধর্মঘটের বিরোধিতা করে নবান্নের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল - ১০ মার্চ, শুক্রবার কোনো সরকারি কর্মচারী পূর্ণ বা অর্ধ দিবস ছুটি নিতে পারবেন না। বিজ্ঞপ্তি না মানলে কর্মজীবন থেকে একদিন বাতিল ও একদিনের বেতন কাটা যাবে।

জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা আর ভয় পাচ্ছেন না সরকারকে। ফেসবুকে সৌমেন দলুই নামে ব্যাক্তি লিখেছেন, ‘জীবনে প্রথম বার show cause notice হাতে পেয়ে গর্বিত বোধ করছি। Appointment letter হাতে পেয়ে এতটা গর্ব হয়নি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যে এতটা আনন্দ আগে বুঝতে পারিনি।’

ছবি সৌজন্যে - সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ

অনুপ ঘোশাল নামে এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘একদিনের বেতন কাটার অর্ডার হাতে পেলাম। ছেলেমেয়েকে বলতে পারলাম, তাদের বাবা বেতন কম পেতে পারে কিন্তু শিরদাঁড়া বিক্রি করেনি।’

আবার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে আসা ‘শোকজ লেটার’ ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন সোনালী সেনগুপ্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক শিক্ষিকা। সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্কুলের একুশ জন শিক্ষিকার মধ্যে আমি একাই ছিলাম ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী। তাই এই সার্টিফিকেট একাই পেলাম। সুস্থ-সবল শিরদাঁড়ার সার্টিফিকেট।’

ছবি সৌজন্যে - সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ

বৃহস্পতিবার, বিপ্লব সরকার নামে এক আন্দোলনকারী লিখেছেন, ‘১২ বছর ৮ মাস ১৮ দিন চাকরি করার পর আজ এমন একটা লেটার পেলাম যা নিয়ে নিজেকে গর্ব বোধ করছি। আগামীর কাছে আমি মাথা উচু করে বলতে পারবো এক সময় DA নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল যাতে আমিও সামিল হয়ে ছিলাম, কারন আমাদের শিরদাঁড়াটা শক্ত ছিলো। স্বামীজির সেই স্মরণীয় উক্তি 'এই পৃথিবী তে যখন এসেছিস দাগ রেখে যা ' তো আমরাও আজ একটু হলেও দাগ রাখতে পারলাম কি না জানি না। তবে নিজের মনে হচ্ছে একটু দাগ এর অংশিদার হতে পেরেছি। আবারো বলছি- শিরদাঁড়া এখনো শক্ত আছে এবং বিক্রি নেই।’

ছবি সৌজন্যে - সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ

শুধু তাই নয়, মৃত শিক্ষকদের নামেও শোকজ লেটার পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। কৌশিক ঘোষ নামে এক জনৈক ব্যক্তি ফেসবুকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, 'আমার স্ত্রীর স্কুলে আজ সবাই তো ১০ তারিখের শোকজ চিঠি পেয়েছে। মুশকিলটা হলো ৩ বছর আগে মারা যাওয়া এক প্রাক্তন মাস্টারমশাইয়ের নামেও চিঠি ধরিয়েছে তৎপর দফতর। এখন বেচারারা বুঝে উঠতে পারছে না যে কোন উপায়ে স্বর্গে এই মহামূল্যবান ফরমান পৌঁছে দেওয়া যায়। যদি কারো কোনো পদ্ধতি জানা থাকে তাহলে বলে ওদের উদ্ধার করতে অনুরোধ করছি।'

শোকজ লেটার হাতে শিক্ষকরা
CPIM: কাকাবাবুর লেখা ‘চিরকুট’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, এমন কী লেখা আছে সেই চিরকুটে?

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in