বিভিন্ন মহল থেকে আগেই অভিযোগ উঠেছিল জেলে বসেই অনুগামীদের কাজে লাগিয়ে তাঁর বিরুদ্ধের সাক্ষীদের হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন শাহজাহান। এবার সন্দেশখালির প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে যাবার পথে দু’জনের মৃত্যু এবং অন্যতম সাক্ষীর আহত হওয়ার ঘটনায় সেই সন্দেহ আরও তীব্র হল। যদিও এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলেই জানা গেছে। যদিও ন্যাজাট থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সন্দেশখালির শাহজাহানের বিরুদ্ধে হওয়া একাধিক মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ভোলানাথ ঘোষ। জানা গেছে, বুধবার তিনি একটি গাড়িতে করে বসিরহাট আদালতে সাক্ষী দিতে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে ছিলেন ভোলানাথ ঘোষের ছোটো ছেলে ও গাড়ির চালক। আদালতে যাওয়ার পথে তাদের গাড়িতে ধাক্কা মারে একটি লরি। যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাক্ষী ভোলানাথ ঘোষের ছেলে এবং গাড়ির চালকের। আহত হন সিবিআই-এর মতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ভোলানাথ ঘোষ। ভোলানাথ ঘোষের বড় ছেলে দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবেই এই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের মতে, দুর্ঘটনার পরে লরির চালক ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাইকে করে পালিয়ে যায়। আহত ভোলানাথ ঘোষ সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়। তাঁর বড়ো ছেলে দাবি করেছেন, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শাহজাহানের নির্দেশেই তাঁর বাবা এবং ভাইকে খুনের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
আহত ভোলানাথ ঘোষ জানিয়েছেন, মালঞ্চের দিকে যাওয়ার সময় বয়ারমারি পেট্রল পাম্পের কাছে তাদের গাড়িতে একটি লরি ধাক্কা মারে। তিনি গাড়ির সামনের আসনে বসে ছিলেন। পেছনের আসনে ছিলেন তাঁর ছোটো ছেলে। দুর্ঘটনায় তাঁর ছোটো ছেলে এবং গাড়ির চালকের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, শাহজাহান জেলে থাকতে পারেন, কিন্তু ও জেলে বসেই হুমকি দিচ্ছে। ওর লোকজনকে দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে লরির চালক সন্দেশখালির বাসিন্দা এবং শাহজাহান ঘনিষ্ঠ। শাহজাহানের কথাতেই তিনি এই কাজ করেছেন।
২০২৪-এর ৫ জানুযারী সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আহত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। তার ১৯ দিন পর সকালে শাহজাহানের বাড়িতে ফের তল্লাশিতে যায় ইডি। তাঁর বাড়ির দেওয়ালে সাঁটানো নোটিসে বলা হয়, ২০০২ সালের আর্থিক তছরুপ বিরোধী আইনের ধারা অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং নিজের পাসপোর্ট আকারের ছবি।
শাহজাহান প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শেখ শাহজাহান কী করেছে? যেদিন ঘটনা ঘটেছে শেখ শাহজাহান ছিল বলে আমার জানা নেই।
২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ৫৫ দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পরে গ্রেপ্তার হয় সন্দেশখালির ত্রাস শাহজাহান। মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল।
সংবাদসংস্থা আইএএনএস-এর তথ্য অনুসারে, অভিযুক্ত শাহজাহান প্রাথমিকভাবে তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রধান আস্থাভাজন ছিলেন। পরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রেশন বিতরণ কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হন। সূত্র অনুসারে, শাহজাহান অভিযুক্তদের পক্ষে বিশাল আইনি খরচ জোগানোর প্রধান উত্স ছিলেন। ২২ আগস্ট, ২০২৩ গোরু পাচার কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল কংগ্রেসের অপর নেতা অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হবার পর তহবিল সংগ্রহের প্রধান উৎস হিসেবে তাঁর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক দিনগুলিতে অনুব্রত মন্ডলের আইনি খরচের জন্য গোপনে অর্থও যুগিয়েছেন শাহজাহান বলেও ইডি তথ্য পেয়েছে। একজন রেশন ডিস্ট্রিবিউশন ডিলার হওয়ার পাশাপাশি, শাহজাহান উত্তর ২৪ পরগণার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি সন্দেশখালি এলাকার বেশিরভাগ মাছের ভেড়ির প্রধান পরিচালক বলেও জানা গেছে। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ ছিল।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন