
স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জেলায় তীব্র বিক্ষোভ সংগঠিত হচ্ছে। অভিযোগ, এর ফলে বিদ্যুতের বিল বেশি আসছে। এই আবহে আপাতত স্থগিত রাখা হল স্মার্ট মিটার বসানো। রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হল, সরকারি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া উপভোক্তাদের বাড়িতে আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে স্মার্ট মিটার বসানো। আরও জানানো হয়েছে, কিছু অভিযোগ পাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মানুষের দাবি, স্থগিত নয়, প্রত্যাহার করতে হবে স্মার্ট মিটার বসানো।
রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি দফতর এবং টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার ছাড়াও তিন-চারটি জেলায় কিছু সংখ্যক উপভোক্তার বাড়িতে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রায় আড়াই লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানো হয়। যার মধ্যে ৬০ হাজারের ওপর সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক। কিন্তু তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ, পুরানো মিটারে যে বিল আসত, স্মার্ট মিটারে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বিল আসতে শুরু করেছে।
সোমবার এই স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতে অবরোধে সামিল হন এলাকার মানুষ। প্রায় ১ ঘন্টার বেশি সময় ধরে পথ অবরোধ করে রাখা হয়। এছাড়া এদিনই বনগাঁতেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। শহরের বিদ্যুৎ দফতরের স্থানীয় অফিসে প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষ গিয়ে স্মার্ট মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে আবেদন পত্র জমা দেন। এছাড়া হুগলির চন্দননগর, পূর্ব বর্ধমানের কালনা, কাটোয়া-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা যায়।
শুধু সোমবার নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েকদিন ধরেই স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জনরোষ দেখে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে সরকার।
রাজ্যের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, "বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস ও টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার ইত্যাদির মতো জায়গায় সফলভাবে স্মার্ট মিটার লাগানোর পর তিন থেকে চার জেলায় কিছু সংখ্যক গার্হস্থ্য উপভোক্তার বাড়িতেও পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ট মিটার লাগানো হয়। এমতাবস্থায় কিছু অভিযোগ আসায় প্রয়োজন মোতাবেক পদক্ষেপ করার জন্য গার্হ্যস্থ উপভোক্তার বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো বন্ধ রাখা হলো'।
এই নিয়ে ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, তারা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ওই শীর্ষ কর্তার কথায়, "হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত গৃর্হ্যস্থ পরিবারে স্মার্ট মিটার বসানোর পরবর্তী কাজ স্থগিত রাখা হচ্ছে। তবে মোবাইল টাওয়ার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ চলবে"।
এদিকে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সিআইটিউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সম্পাদক অনাদি সাহু বলেন, "সরকার আপাতত স্থগিত রাখার কথা বলেছে। তবে আমরা চাইছি স্থগিত নয়, স্মার্ট মিটার বসানো পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। স্মার্ট মিটার বসানো মানে বিদ্যুতের বেসরকারিকরণকে মেনে নেওয়া। আমরা কিছুতেই এটা মানব না"।
অন্যদিকে, এই নিয়ে অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস বলেন, "জবরদস্তি করে লাগানো স্মার্ট মিটার খোলার বিষয়ে কোনও বক্তব্য নেই। কমার্শিয়াল, ক্ষুদ্রশিল্প ও গৃর্হ্যস্থ, যাদের এই স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে সেগুলো খুলে নিতে হবে। সামগ্রিক গ্রাহকদের টাকা লুঠ করার যন্ত্র স্মার্ট মিটার প্রকল্প বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন