
রাজ্যে ফের ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকায় এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে। জানা গেছে, নির্যাতিতা ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের মেডিক্যাল পড়ুয়া। ওড়িশার জলেশ্বর থেকে পড়াশোনার জন্য এসেছিলেন তিনি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন নির্যাতিতা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে নির্যাতিতার পুরুষ বন্ধুকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ তরুণী এক পরিচিত পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে কলেজ চত্বরের বাইরে বেরোন। খাবার কিনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, তখন কয়েক জন যুবক তাঁদের উত্যক্ত করেন। নির্যাতনের আগে তরুণীর কাছে থেকে মোবাইল এবং টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়া হয়। পুরুষ সঙ্গী প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। জানা যায়, সেসময় তরুণীকে একা রেখে পালিয়ে যান ওই পুরুষ সঙ্গী।
এরপরে তরুণীকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কাছের একটা জঙ্গলে। সেখানেই ৪-৫ জন যুবক মিলে তরুণীকে গণধর্ষণ করে। যদিও ঘটনার পর নির্যাতিতাকে হাসপাতালে পুরুষ সঙ্গীই ভর্তি করেছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্যভবন।
নির্যাতিতার বাবা এক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “রাত ১০টা নাগাদ ওঁর বন্ধু আমাকে ফোন করেছিল। এখানে চলে আসি তাড়াতাড়ি। সাড়ে ৯টা নাগাদ একটা ছেলে খাবার খেতে আমার মেয়েকে গেটের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তখন ২-৩ জন স্থানীয় যুবক চলে আসে। ছেলেটা ওকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই সময় একজন আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। মোবাইল কেড়ে নেয়। ৩ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে পারেনি। পরে ছেলেটা আবার ঘটনাস্থলে ফিরে আসে। সেই সময় ৪-৫ অপরিচিত যুবক ছিল। তাদের হাতে ৩০০ টাকা দিয়েছিল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেয়ে। তখন মেয়েকে নিয়ে ওই ছেলেটা হাসপাতালে যায়।”
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন নির্যাতিতা। যদিও তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। তবে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তিনি। প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তা নিয়ে। নির্যাতিতার বাবার দাবি, ঘটনার পরেও কলেজের হস্টেলে কোনও নিরাপত্তা নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁর বাবার অনুমান, এই ঘটনার সঙ্গে নির্যাতিতার সহপাঠী জড়িত থাকতে পারে। দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন তাঁর পরিবার।
ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে তৎপর আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত জানিয়েছেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে কোনও রকম ত্রুটি রাখা হবে না।” তিনি আরও জানান, নতুন তথ্য হাতে এলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, রাতেই নির্যাতিতার ওই পুরুষ বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এরপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যুবককে। তবে শনিবার সকাল থেকে কলেজ চত্বরে আর ওই যুবককে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে এক ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল কলকাতা-সহ রাজ্য। সেই ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন