
চলতি বছরই পদ্মশ্রী পেয়েছেন বেলডাঙ্গা ভারত সেবাশ্রমের প্রধান কার্তিক মহারাজ (Kartik Maharaj) ওরফে স্বামী প্রদীপ্তানন্দ। এবার সেই সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। এমনকি সন্তান সম্ভবাও হয়ে পড়েন নির্যাতিতা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কার্তিক মহারাজ। তাঁর দাবি রাজনৈতিক কারণেই তাঁর নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানায় কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন এক মহিলা। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাটি ১২ বছর আগের। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মহারাজের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে তাঁকে শিক্ষকতার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রথমে আশ্রমেই তাঁকে থাকতে দেন কার্তিক মহারাজ। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে স্কুলের হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, "প্রতিদিনই তিনি (কার্তিক মহারাজ) পাঁচতলায় আমার ঘরে আসতেন। মহারাজ আমাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। একবার, পাঁচ দিন তাঁর আশ্রমে থাকতে বলেন। তারপর তিনি আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিলেন এবং প্রতি মাসে টাকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন"।
অভিযোগকারিণীর দাবি, তাঁর প্রস্তাবে রাজি হওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। কখনও কার্তিক মহারাজ আসতেন তাঁর ঘরে, কখনও তাঁকে ডেকে পাঠাতেন। পরে তিনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন।
নির্যাতিতার অভিযোগ, ২০১৩ সালে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। সেই সময় বহরমপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক তাঁর গর্ভপাত করানো হয়। তিনি বলেন "আমি যখন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করি তখন তিনি আমাকে হুমকি দেন। দুই (স্কুল) কর্মীর উপস্থিতিতে, তিনি নার্সিং হোমের একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলেন এবং আমাকে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেন।"
নির্যাতিতা জানান, প্রথম দিকে তিনি সবকিছু সহ্য করে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন তাঁকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু একসময় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
গত ১২ জুন মহারাজের সাথে ফের যোগাযোগ করেন নির্যাতিতা। কিন্তু তাঁকে ফের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, "১২ জুন আমি তাঁকে ফোন করেছিলাম। তিনি আমাকে ১৩ জুন সন্ধ্যা ৭টায় বহরমপুরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন দুজন লোক আমাকে নিতে আসবে। আমি অপেক্ষা করছিলেম। দুজন লোক এসে আমাকে তাদের গাড়িত তোলে এবং আমাকে হুমকি দেয় আমি যেন মহারাজের সাথে আর যোগাযোগ না করি। এরপর আমাকে গালিগালাজ করে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।"
এরপর বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানায় অভিযোগ জানান নির্যাতিতা।
যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কার্তিক মহারাজ। তিনি বলেন, "সময় সবকিছু প্রকাশ করে দেবে। এটা আমার নাম ও খ্যাতি নষ্ট করার জন্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাদের আশ্রমে অনেক মহিলা কর্মরত এবং অনেক মহিলা শিষ্যা আছেন। তাদের জিজ্ঞাসা করুন। সবাই বলবে আমরা নারীদের আমাদের মায়ের মতো সম্মান করি"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন