
দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে পরিবারের দাবি মতো কল্যাণীর এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সিঙ্গুরে নিহত নার্স দীপালী জানার দেহ। এখানেই হচ্ছে ময়নাতদন্ত। জানা গেছে এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত চলছে দীপালীর। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে চলছে গোটা প্রক্রিয়া। এছাড়া স্বচ্ছতার স্বার্থে করা হচ্ছে ভিডিওগ্রাফিও।
গত বুধবার সিঙ্গুরের একটি নার্সিংহোমে কর্মরত নার্স দীপালীর রহস্য মৃত্যু হয়। দীপালীর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। তাঁর বাবার অভিযোগ, ওই দিন রাত ১১টা নাগাদ মেয়েকে ফোন করে নার্সিংহোমে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কারণ জানানো হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্ম*ঘাতী হন দীপালী। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছালেও দিপালীর দেহ দেখতে পাননি তাঁর বাবা-মা। জানানো হয়, পুলিশ এসে দীপালীর দেহ নিয়ে গেছে। এরপরই পরিবারের তরফ থেকে খুনের অভিযোগ তোলা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই নার্সিংহোমের মালিক এবং মৃতার প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।
দিন কয়েক আগেই সিঙ্গুরের ওই নার্সিংহোমে যোগ দিয়েছিলেন দীপালী। এক বান্ধবীর সূত্র ধরেই সিঙ্গুরের বোড়াই তেমাথা এলাকায় ওই নার্সিংহোমে কাজ পান তিনি। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরু থেকে নার্সিং পড়ে কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরেছেন মেয়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল দীপালীর। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে দুজনের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। পুলিশের অনুমান, নার্সের মৃত্যুর পেছনে প্রেমিকের ভূমিকা থাকতে পারে। এছাড়া আরও জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে বাড়ি যাওয়ার সময় দীপালীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন ওই নার্সিংহোমের মালিক। নার্সিংহোমের মালিককেও সন্দেহের তালিকায় রাখছে পুলিশ। তবে আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে এই ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রথম থেকেই টানাপোড়েন চলছে। প্রথমে হুগলি জেলা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠিয়েছিল শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে। কিন্তু ওই হাসপাতালের সুপার রেফার করে দেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের পুলিশ মর্গে। যা নিয়ে আপত্তি জানায় পরিবার। তাদের দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনও হাসপাতালে মেয়ের ময়নাতদন্ত হোক। দীর্ঘ টালবাহানার পর সেই দাবি মেনেই, কল্যাণী এইমসে চলছে ওই নার্সের ময়নাতদন্ত।
অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনা নিয়ে গত তিনদিন ধরে রাজনৈতিক শোরগোলও চলছে। খুনের অভিযোগ তুলে নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধীরা। যদিও বিরোধীদের মধ্যেও 'মৃত দেহের দখল' নিয়ে বচসা বাঁধে। কলকাতা পুলিশের মর্গের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। এসএফআই ও সিপিআইএমের তরফে অভিযোগ করা হয়, বিজেপির তৃণমূল পক্ষ থেকে এখানে এসেছে পরিবারকে কিনতে। বিজেপির পাল্টা দাবি, লড়াইটা শুরু থেকে তারাই করছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন