

একবার-দু'বার নয়, চারবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সম্প্রতি প্রকাশিত 'Operation Black Stiletto: My Days In Intelligence' নামক একটি বইয়ে। বইয়ের লেখক দিলীপকুমার মিত্র। তিনি রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল ও রাজ্য ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের প্রাক্তন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টের জেনারেল।
প্রথম ঘটনা ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে। এই ঘটনা অবশ্য সবারই জানা। জিন্দাল শিল্পগোষ্ঠীর প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী থেকে কলকাতা ফিরছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কনভয় ফিরছিল সড়কপথে। অন্য আর একটি কনভয়ে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান ও রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। সেদিন আচমকাই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কনভয়ের কাছেই একটি বিস্ফোরণ হয়। তাতে বুদ্ধবাবুর কোনও ক্ষতি হয়নি। অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি। কিন্তু ঘটনার তদন্তে নেমে পরে জানা যায়, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল মাওবাদীদের।
ওই বই থেকে জানা যাচ্ছে, শালবনি ছাড়াও আরও তিনবার তিন জায়গায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল- একবার কলকাতায় রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরণে, একবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর কাছে। তৃতীয়বার মুর্শিদাবাদে।
এই বইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রথমবার বুদ্ধবাবু হত্যার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন ২০০১ সালে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের কাছে বুদ্ধবাবুর গাড়িতে গ্রেনেড লঞ্চার দিয়ে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু ওই আক্রমণ হওয়ার আগেই গ্রেফতার হয় ওই ষড়যন্ত্রের মূল চক্রী। ফলে ফাঁস হয়ে যায় ষড়যন্ত্র।
আর একবার, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জেলা সফরে যান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে সফর করছিলেন তিনি। তখন তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল ইসমত আরা ও জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস নামে এক দম্পতি। তবে তাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তার আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের। তাদের জেরা করে রাজ্য পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ জানতে পারে, হত্যার ছক কষা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে।
শেষ ছক ছিল, রাইটার্স বিল্ডিং-এ। মহাকরণের যে ঘরে বুদ্ধবাবু বসতেন, তার পাশের ঘরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল ষড়যন্ত্রীরা। কিন্তু ঘটনার আগেই ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোয়েন্দারা ধরে ফেলেন ষড়যন্ত্রের মূলচক্রী বাবলু। তার ওই ঘরে বিস্ফোরক রাখার কথা ছিল। কিন্তু বানচাল হয়ে যায় গোটা পরিকল্পনা। ফলে বেঁচে যান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন