দুর্যোগ কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাহাড়! পর্যটকেরা ফিরছেন সমতলে, কেমন থাকবে উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া?

People's Reporter: আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আপাতত উত্তরে আর বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে দক্ষিণে এখনও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে কিছু এলাকায়।
বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ
বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গছবি - সংগৃহীত
Published on

শনিবার থেকে টানা বৃষ্টির দাপটে বিপর্যস্ত পাহাড় এখন ধীরে ধীরে ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দে। সোমবার সকালের পর থেকে দার্জিলিংয়ে নতুন করে আর বৃষ্টি হয়নি। মেঘের আড়াল সরে গিয়ে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘারও। আবহাওয়া অনুকূলে আসায় পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া পর্যটকেরা নেমে আসছেন সমতলে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আপাতত উত্তরে আর বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে দক্ষিণে এখনও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে কিছু এলাকায়।

গত কয়েক দিনে প্রবল বর্ষণ ও ধারাবাহিক ধসে দার্জিলিং, মিরিক, সুখিয়াপোখরি ও কালিম্পং-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বহু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে জেলা প্রশাসন ও জিটিএ-র উদ্যোগে দ্রুত মেরামতির কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাও খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে হিল কার্ট রোড এবং পাঙ্খাবাড়ি রোড।

বর্তমানে হিল কার্ট রোড এবং পাঙ্খাবাড়ি রোড দিয়ে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ির দিকে নামা সম্ভব হচ্ছে। তিনধারিয়া হয়ে সুকনা পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী বলে জানানো হয়েছে। পাঙ্খাবাড়ি রোডও খোলা, যদিও রাস্তার কিছু অংশ এখনো দুর্গম। বিজনবাড়ি অঞ্চলে যাঁরা কয়েক দিন ধরে আটকে ছিলেন, তাঁদেরও এই দুটি পথ ধরে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, রোহিণী রোড সোমবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। দুধিয়ার কাছে সেতু ভেঙে পড়ায় মিরিকের রাস্তাও আপাতত ব্যবহারযোগ্য নয়। সেনাবাহিনী সেখানে একটি বেলি ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যে সেনা জওয়ানরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছেন। সিকিম থেকে কালিম্পং-লাভা-লোলেগাঁও হয়ে শিলিগুড়ির বিকল্প রুট আপাতত চালু রয়েছে।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত শিলিগুড়ি–রংপো রুটে ভারী পণ্যবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাস চলাচল পরিস্থিতি অনুযায়ী অনুমোদন পেতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিয়ম আগামী চার সপ্তাহ পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

জিটিএ সূত্রে জানা গেছে, মিরিক ব্লকের একাধিক রাস্তার মেরামতির কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সুখিয়োপোখরির সোনাদা থেকে মুনদা পর্যন্ত এবং মিলিং রোড এখন চলাচলের উপযোগী। বিজনবাড়ি ও গরুবাথানের কিছু অংশে এখনো কাজ চলছে।

দুধিয়ার ভাঙা সেতু পরিদর্শনে গিয়ে দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ জানিয়েছেন, সেতুর এক প্রান্ত থেকে শিলিগুড়ির দিকের রাস্তা ঠিক আছে, তবে মিরিকের দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “বর্তমানে কার্শিয়াং হয়ে পাঙ্খাবাড়ি ও হিল কার্ট রোড দিয়েই যাত্রীদের পাঠানো হচ্ছে। রোহিণী পয়েন্টের ধসগ্রস্ত অংশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।”

প্রবল বর্ষণে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৫ জনের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিক ও সুখিয়াপোখরি এলাকায়। বহু ঘরবাড়ি ও সেতু ধসে গিয়েছে, রাস্তাঘাট ভেসে গেছে বৃষ্টির জলে। তবে সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আপাতত উত্তরবঙ্গে নতুন করে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা নেই।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বিহার ও অসমের উপর ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় থাকলেও তার প্রভাব সীমিত। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে অল্প বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা বিদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। সপ্তাহান্তে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির পরিমাণ আরও কমবে।

দক্ষিণবঙ্গে যদিও এখনও মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার ও বুধবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, নদিয়া এবং দুই ২৪ পরগনায় ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গেও আবহাওয়া স্থিতিশীল হবে বলে অনুমান।

কলকাতায় সোমবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৩ ডিগ্রি কম। মঙ্গলবার ভোরের তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বেশি।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in