
কলকাতার লাগোয়া বাণতলায় ম্যানহোল পরিস্কার করতে নেমে মৃত্যু হল তিন শ্রমিকের। এঁদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদ এবং অন্য এক জনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগণা। মৃত শ্রমিকদের নাম যথাক্রমে ফরজেম শেখ (৬০), হাশিবুর রহমান (২৬) এবং সুমন সর্দার (৩২)। প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি শীর্ষ আদালত দেশের ছ’টি মেট্রো শহরে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং বা মানুষ নামিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই বিষয়ে হলফনামা জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৯ ফেব্রুয়ারি।
ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে নিহত তিন শ্রমিকের মধ্যে ফরজেম এবং হাশিবুরের বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। অন্য শ্রমিক সুমন সর্দারের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটে। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, নির্মাণের কাজ দেবার নাম করে তাদের কলকাতায় এনেছিল স্থানীয় ঠিকাদার আলিমুদ্দিন। কিন্তু নির্মাণের কাজ না দিয়ে তাদের দিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কারের কাজ করানো হত। আর সেই কাজ করতে গিয়েই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তিন শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা করে দেবার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ঠিকাদারের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, এক সহকর্মী ফোন করে প্রথমে মুর্শিদাবাদে শ্রমিকদের মৃত্যুর কথা জানান। এরপর পরিবারের লোকজন ঠিকাদারকে ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। পরে পুলিশের কাছ থেকে মৃত্যু সংবাদ গিয়ে পৌঁছায়।
শ্রমিকদের মৃত্যু প্রসঙ্গে সিআইটিইউ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিযায়ী ইউনিয়নের সম্পাদক কামাল হোসেন জানান, নিয়ম মেনে কাজ হয় না। শ্রমিকদের ন্যূনতম সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয় না। এঁদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশ জুড়ে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং বন্ধ করার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার। সম্প্রতি সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্র রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারতের ৭৭৫ টি জেলার মধ্যে ৪৫৬ টি জেলায় ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং নিয়ে কোনও ঘটনার রিপোর্ট করা হয় নি। অর্থাৎ এই জেলাগুলিতে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং পুরোপুরি নির্মূল।
১৯৯৩ সালে দেশে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয় ম্যানুয়াল স্ক্যাভাঞ্জিং। যদিও তারপরেও সারাদেশে চলছে এই নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড। এর জেরে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যুও হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন