
নদীয়ার কালীগঞ্জে তমন্না খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত গাওয়াল শেখ এবং তার এক ছেলে বিমল শেখ। শুক্রবার রাতে বর্ধমানের কাটোয়া থেকে এই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গাওয়াল শেখ তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি। নিহত নাবালিকার মা সাবিনা বিবি দাবি করেছিলেন, গাওয়াল শেখই এই সমস্ত ঘটনার মাথা। তিনিই তাঁদের বাড়ি উদ্দেশ্য করে বোমা ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এফআইআরে গাওয়াল শেখ এবং তাঁর দুই ছেলে বিমল শেখ এবং হাবিবুল শেখের নাম রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে হাবিবুল শেখকেও মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেছেন, ‘‘গাওয়াল শেখ কালীগঞ্জ বোমাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তল্লাশি অভিযান চলছে। শীঘ্রই সকল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’’
এর আগে শুক্রবার বিকেলে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার চৌরিগাছা থেকে হাবিবুল শেখ ও আর এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া অন্য জনের নাম নবাব শেখ। তিনিও তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত এলাকায়। ধৃতদের শনিবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে হাজির করানো হবে। ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ। আর আগে মঙ্গলবারই গ্রেফতার করা হয় ধৃত নবাবের বাবা মানোয়ার শেখকে।
গত ১৯ জুন কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়। সোমবার ছিল ভোটগণনা। গণনার প্রথম থেকেই প্রতিটি রাউন্ডেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল এবং প্রত্যাশিতভাবেই জয়ী হন প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের কন্যা তথা তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কালীগঞ্জে জয় নিশ্চিত হয়ে যাবার পর চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই বিজয় মিছিল বের করে স্থানীয় তৃণমূল। আর সেই বিজয়মিছিল থেকেই বোমা ছোঁড়া হয় এক সিপিআইএম সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে। যে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বছর দশেকের তামান্না খাতুনের। ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পলাশীর মেলেন্দি এলাকায়।
এই ঘটনায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তামান্নার মা সাবিনা খাতুন। এখনও পর্যন্ত নয় জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও অধরা ১৫ জন।
নদিয়ার সিপিআইএম নেতা এসএম সাদি পুলিশকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘পুলিশ আগে থেকেই সব জানত। তারাই দুষ্কৃতীদের ‘সেফ প্যাসেজ’ দিয়ে রেখেছিল। শনিবার আমাদের প্রতিবাদ সভা আছে। ক্ষুব্ধ মানুষের জমায়েত আছে। পুলিশ ভয় পেয়ে কয়েক জনকে গ্রেফতার করছে। এসব নাটক চলবে না। এলাকার প্রত্যেক তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করতে হবে।’’
অন্যদিকে, শুক্রবার তামান্নার বাড়িতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শাসক তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘গোটা কাণ্ডের মূল মাথা গাওল শেখ। সে এখনও অধরা। আর এখনও দুষ্কৃতীদের বাড়িতে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা মজুত রয়েছে। বোমা উদ্ধারে পুলিশের ভূমিকা ইতিবাচক নয়"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন