মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরই মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা কল্যাণের! বললেন, দিদি তাঁর প্রতি 'অবিচার' করলেন

People's Reporter: সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের সাংসদদের ভার্চুয়াল বৈঠকে লোকসভার সাংসদদের মধ্যে ঠিকমতো সমন্বয় হচ্ছে না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলনেত্রী।
কল্যাণ ব্যানার্জী
কল্যাণ ব্যানার্জীছবি - সংগৃহীত
Published on

লোকসভার তৃণমূলের সংসদীয় দলের মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করার পরেই এই ইস্তফা পত্র দলনেত্রীকে পাঠান কল্যাণ। এর কারণ হিসাবে শ্রীরামপুরের সাংসদ জানিয়েছেন, দলনেত্রী তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারেননি। যদিও কল্যাণের ইস্তফা পত্র গ্রহণ করেনি তৃণমূল। জানা গেছে, আগামী ৭ আগস্ট দিল্লি গিয়ে কল্যাণের সঙ্গে বৈঠক করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ততদিন পর্যন্ত তাঁকে মুখ্য সচেতকের পদ সামলানোর কথা জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের সাংসদদের ভার্চুয়াল বৈঠকে। এদিন দলনেত্রী লোকসভার সাংসদদের মধ্যে ঠিকমতো সমন্বয় হচ্ছে না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যা শুনে কল্যাণের বক্তব্য, তাঁর দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ। তিনি সংসদে যান না। উপদলনেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদার কখনও যান, কখনও যান না। আমি এক দিকে মামলা করি, তার সঙ্গে সংসদ করি। আমার পক্ষে আর কতটা সম্ভব?’’

এমনকি তৃণমূল সূত্রে এ-ও খবর যে, সংসদে কোন বিষয়ে কে বলবেন, সে ব্যাপারে মমতা কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছিলেন ওই বৈঠকে। যদিও সেটি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন কল্যাণ। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি এটা ঠিক বলেননি। এটা সত্য নয়। আমি সব জানিয়েছি দিদিকে।’’ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে কল্যাণ বলেন, ‘‘আমি দিদিকে জানিয়েছিলাম। দিদি মহুয়া মৈত্রের নাম বলেছিলেন। আমি তখন বলি, মহুয়া বললে আমি সংসদে থাকব না। তার পরে দিদিই সায়নী ঘোষের নাম বলেন।’’ কল্যাণের বক্তব্য, মমতা তাঁর প্রতি ‘অবিচার’ করলেন।

কল্যাণ জানিয়েছেন, লোকসভায় দলের সহকারী নেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে তিনি বলেছেন, কল্যাণের জন্য যেন লোকসভায় পিছনের দিকের একটি আসন নির্দিষ্ট করা হয়। কল্যাণের মন্তব্য, ‘‘আমার দরকার ফুরিয়ে গিয়েছে।’’ পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, ‘‘এ বার দিদিই দল চালান!’’

যদিও অভিজ্ঞদের মতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারেননি, এটাই কল্যাণের ইস্তফার একমাত্র কারণ হতে পারে না। তাহলে এর জন্য কৃষ্ণনগরের সাংসদ তথা তারই দলের নেত্রী মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে সংঘাতও কি দায়ী? কারণ ইস্তফা পত্র দেওয়ার আগেই এক্সে মহুয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দীর্ঘ একটি পোস্ট করেছিলেন কল্যাণ। আবার অনেকের মতে, কল্যাণের ইস্তফার দিনেই মমতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভার দলনেতা ঘোষণা করেছেন। সেটাও ইস্তফার কারণ হতে পারে। যদিও কল্যাণ জানিয়েছেন, অভিষেকের লোকসভার নেতা হওয়ার সঙ্গে তাঁর ইস্তফার কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর কথায়, "অভিষেকের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক।"

অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, কল্যাণ ইস্তফা দেওয়ার পরেই তাঁকে ফোন করেছিলেন অভিষেক। সূত্রের খবর, অভিষেক কল্যাণকে বলেছেন, আগামী তিন-চার দিন আগের মতোই মুখ্য সচেতকের কাজ সামলাতে। এত মান-অভিমান না-করতে। ৭ আগস্ট দিল্লি যাওয়ার কথা অভিষেকের। দিল্লি পৌঁছে তিনি কল্যাণের সঙ্গে বসে আলাদা করে কথা বলবেন বলে খবর। দল সূত্রে খবর, কল্যাণ ইস্তফা দিলেও তা আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়নি। আবার অভিষেকের ফোনের পরে কল্যাণ ইস্তফার চিঠি প্রত্যাহার করছেন বলেও জানাননি। যদিও অভিজ্ঞদের মতে, এর আগেও বহুবার দলের সঙ্গে মন কষাকষি হয়েছে কল্যাণের। পরবর্তীতে তা মিটেও গেছে। তৃণমূলের একাংশের মতে, এবারও তেমনটাই হবে। যদিও অন্য একাংশের মতে, লোকসভার সংসদীয় দলে কল্যাণের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের উপর।

এদিকে মমতার সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই এক্সে মহুয়াকে নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট করেন কল্যাণ। যেখানে তিনি লেখেন, ‘‘সম্প্রতি একটি পডকাস্টে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য শুনেছি। যেখানে তিনি সহ-সাংসদকে ‘শূকরশাবক’ বলেছেন। যা শুধু অবমাননাকর নয়, সাধারণ নাগরিক রীতির পরিপন্থী।’’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে কল্যাণের প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তাঁর নাম না করলেও শূকরশাবকের সঙ্গে লড়াইয়ের উল্লেখ করেছিলেন মহুয়া। গত লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুরে কল্যাণের বিপক্ষে বামেরা প্রার্থী করেছিল দীপ্সিতা ধরকে। সেই সময়ে দীপ্সিতা সম্পর্কে কল্যাণের নানা মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে কল্যাণের সেই আচরণ এবং মন্তব্য সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘শূকরশাবকের সঙ্গে কখনও লড়াই করতে নেই। সে চাইবে লড়াই করতে। কিন্তু আপনি করলে নোংরাটা আপনার গায়েও লাগবে।’’ এর পরেই মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘নারীবিদ্বেষী, হতাশাগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা সব দলেই রয়েছেন। সংসদেও তার প্রতিফলন রয়েছে।’’

এদিন ইস্তফা পত্র দেওয়ার সময় তাঁর এ-ও বক্তব্য, ‘‘মহিলাকেন্দ্রিক দলে মহিলাদেরই প্রাধান্য। পুরুষদের কোনও গুরুত্ব নেই।’’ এখন দেখার অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর আদৌ সমস্যার সমাধান হয় কিনা!

কল্যাণ ব্যানার্জী
চিঠিতে বাংলাকে 'বাংলাদেশী ভাষা' উল্লেখ! 'নিরক্ষর' দিল্লি পুলিশকে সংবিধান পাঠের পরামর্শ CPIM-তৃণমূলের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in