ভারতীয়দের সমগ্র ভারতবর্ষেই অধিকার আছে, কেন্দ্রের 'পুশব্যাক' নীতির তীব্র নিন্দায় অমর্ত্য সেন

People's Reporter: অমর্ত্য সেন বলেন, "শুধু বাঙালি নয়, দেশের যে কোনও প্রান্তের মানুষ, অন্য প্রান্তে হেনস্তা হলে তা আপত্তিকর"।
অমর্ত্য সেন
অমর্ত্য সেনফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

"ভারতীয়দের সমগ্র ভারতবর্ষের উপর অধিকার আছে!" দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের তীব্র নিন্দা করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

সদ্য দেশে ফিরেছেন অমর্ত্য সেন। এরপরেই নিজের শান্তিনিকেতনের বাড়ি থেকে গরিব শ্রমজীবী বাংলাভাষী মানুষের উপর অমানবিক হেনস্তার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তিনি। নোবেলজয়ীর মন্তব্য, "একটা ভাষার যে মূল্য পাওয়া উচিত তা অনেক সময় পায় না, অবহেলিত হলে নিশ্চয়ই তা বন্ধ করতে হবে।" সেই সাথে তিনি যোগ করেন, "যাঁরা ভারতীয়, তাঁদের পুরো ভারতবর্ষের উপর অধিকার আছে। শুধু একটা অঞ্চলের উপর নয়"।

এরপরেই বাংলা ও বাঙালি ভাষা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চর্যাপদ সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের মতামত প্রসঙ্গ উল্লেখ তিনি বলেন, "শুধু বাঙালি নয়, দেশের যে কোনও প্রান্তের মানুষ, অন্য প্রান্তে হেনস্তা হলে তা আপত্তিকর"।

বাংলাভাষীদের বাংলাদেশী সন্দেহে 'পুশব্যাক'র নামে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ারও নজির তৈরি হয়েছে। সে সম্পর্কে অমর্ত্য সেন বলেন, "শুধু বাঙালি নয়, ভারতবর্ষ একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ঐক্যবদ্ধ দেশ। এখানে কোনও অঞ্চলের লোক অন্য জায়গায় হেনস্তা হচ্ছেন, এটার আপত্তির কারণ থাকবে। সে বাঙালি হোক বা পাঞ্জাবি হোক বা মাড়োয়ারী, আপত্তি করার কারণ থাকবে। প্রথম কথা হলো সব মানুষকে সম্মান দেওয়া। যে কোনও ভারতীয়, যদি একজন ওডিশা থেকে গিয়ে রাজস্থানে অবহেলিত হন বা অত্যাচারিত হন, তা নিয়েও আমাদের একই আপত্তির কারণ থাকবে। এটা আলোচনার বিষয় নয়, এটা আমাদের সংবিধানে প্রথম থেকেই বলা আছে"।

এরপরে ভারতবর্ষের মানুষদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন অমর্ত্য সেন। ভারতীয় সংবিধানের উল্লেখ করে অধ্যাপক বলেন, "যারা যে ভাষায় কথা বলেন, তারা সেই ভাষায় কথা বলার সুযোগ পাবেন। তাদের বক্তব্য নিয়ে ঝগড়া করার প্রয়োজন হবে না এটাই আমাদের আশা"।

বাংলার ঐতিহ্য ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে তিনি আরও বলেছেন, "বাংলা ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন শতাব্দী থেকে চর্যাপদ দিয়ে যে ভাষাটার জন্ম হলো, সেই ভাষার মূল্য স্বীকার করতেই হবে। তার মধ্যে নানা কাব্য হলো, লেখা হলো, তারমধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ওনাদের বক্তব্য আমাদের সামনে খুব স্পষ্টভাবে ধরা হলো। এগুলোর আমাদের মূল্য দিতেই হবে। সেই মূল্যগুলোর প্রয়োজন যখন অবহেলিত হয়, একটা ভাষার যে মূল্য পাওয়া উচিত সে মূল্য যখন পায় না, তাদের উপর যখন একটা বড় রকম অবহেলা হয়, সেটা নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে"।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in