হাঁসখালিতে ধর্ষণের ফলে রক্তপাত, আর তার জেরে কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব এখনও মুখ খোলেনি। কিন্তু জেলা নেতৃত্ব তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল। পাশাপাশি জোর করে কিশোরীর দেহ দাহ করার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতেও নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কোনও ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই ওই কিশোরী দেহ দাহ করা হয়েছে গ্রামের এক শ্মশানে।
নাবালিকা ধর্ষণ-কাণ্ডে পুলিশ তৃণমূল নেতা সমর গোয়ালার ছেলে ব্রজগোপাল গোয়ালাকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন-সহ কয়েকটি ধারায় ও পকসো আইনে মামলা রুজু হয়েছে। ধৃত ব্রজগোপালের বিরুদ্ধে গত শনিবার হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নির্যাতিতার পরিবার। তারপর ওইদিন রাতেই বেপাত্তা হয়ে যান অভিযুক্তের বাবা তৃণমূল নেতা সমর। খোঁজ নেই তাঁর পরিবারেরও।
পানিহাটি, ঝালদা, রামপুরহাট, গলসি, মগরাহাটের ঘটনাগুলি দে এমনিতেই অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে আর বিতর্কে জড়াতে চায় না শাসকদল, মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই অভিযুক্তদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও মন্তব্য না করে বিষয়টির ওপর নজর রেখে চলেছে। প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেনি।
অন্যদিকে, কিশোরীর দেহ করার সময় ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ তাকে কোনও ডাক্তার দেখানো যায়নি। সূত্রের খবর, গ্রামাঞ্চলে শ্মশানের সবরকমের নিয়ন্ত্রণ থাকে গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে। ফলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়া মৃতদেহ সৎকার হলে, তার দায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়া দাহ করার সুযোগ না থাকলে এতদিন বিষয়টি চেপে যাওয়া সহজ হত না বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
রবিবার ওই এলাকায় গিয়ে জানা গিয়েছে যে, যে শ্মশানে কিশোরীকে দাহ করা হয়, সেখানে কোনও দিনই কোনও ‘কাগজপত্র’ লাগে না! গত কুড়ি বছর ধরে এটাই নাকি নিয়ম! গ্রামবাসী সূত্রের খবর, আগে ওই শ্মশানে একজন সাধু থাকতেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর প্রৌঢ়া স্ত্রী মাঝে-মধ্যে শ্মশানের ঘরে এসে থাকেন। বাকি সময়ে শ্মশান জনশূন্য।
ফলে নিয়মমাফিক দাহ হচ্ছে কিনা, তা দেখার কেউ নেই। শ্মশানটির কোনও সরকারি অনুমোদনও নেই। স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'এই শ্মশানে কোনও নথিভুক্তির খাতা নেই। এভাবেই মৃতদেহ দাহ হচ্ছে। কোনও কারণে সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হলে, পাশের একটি শ্মশান থেকে নিয়ে আসি।'
কিন্তু ২০১৫-১৬ সালে তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক নিজের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে কংক্রিটের চুল্লি বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে ফলকে লেখা আছে ‘সৌজন্য ... গ্রাম পঞ্চায়েত’। সেই চুল্লিতেই কাঠের আগুনে মৃতদেহ দাহ করা হয় কেন? উঠছে সেই প্রশ্নও।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।