WB Flood: টানা বৃষ্টিতে জলের তলায় ঘাটাল, গড়বেতায় ফিরল '৭৮-এর স্মৃতি! বন্যা পরিস্থিতি একাধিক জেলায়

People's Reporter: হাওড়ার আমতার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। লাগাতার বৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ডিভিসি দফায় দফায় জল ছাড়ার ফলে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর বেড়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি
পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতিছবি - সংগৃহীত
Published on

শনিবার আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলেও গত কয়েক দিনের লাগাতার বর্ষণের ফলে জলমগ্ন (Flood In West Bengal) দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা এবং ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটালের এক বাসিন্দার জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ার খবর মিলেছে। অন্যদিকে বাঁকুড়ার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও হাওড়ার বেশ কিছু অংশ জলের তলায়।

১৯৭৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় বন্যা হয়। চলতি বছর ফের সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গতে কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টিতে গড়বেতা-১ ও ২ ব্লকের যথাক্রমে ১০টি এবং চারটি অঞ্চল প্লাবিত। আগড়া, ধাদিকা, খরকুশমা, বড়মুড়া, সন্ধিপুর, গরঙ্গা, পিয়াশালা, জোগাড়ডাঙা, সারবত, আমলাশুলি এলাকায় শুক্রবার থেকে কিছুটা জল নামতে শুরু করলেও এখনও জলমগ্ন ওই সমস্ত এলাকা।

এই বন্যা পরিস্থিতির কারণে গড়বেতা-১ ও ২ ব্লকে ২১টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণ গ্রাম এলাকায় মেদিনীপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তা ধসে গিয়েছে। শুক্রবার ওই সমস্ত প্লাবিত অঞ্চল পরিদর্শনে যান মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি, পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এবং বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরা। নিজের হাতে দুর্গতদের ত্রাণ তুলে দেন মন্ত্রী।

গড়বেতা ছাড়াও ঘাটালের চন্দ্রকোনাও জলমগ্ন। 'ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান' এর কাজ শুরু হলেও এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য কাজ থমকে গিয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। 'ড্রোন ভিউ' দিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বাঁশের সাঁকো জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। জলের তোড়ে বহু মানুষ ঘরবন্দি। তাঁদের উদ্ধার করতে নেমেছে এনডিআরএফ। অসুস্থদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পর মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, "গড়বেতায় ’৭৮ সালের পর এত বড় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "প্রসূতি মায়েদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তা ছাড়া এই সময়ে সাপের কামড় থেকে রক্ষার জন্য সতর্কতা নিতে হবে"।

ঘাটাল মহাকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, "চন্দ্রকোনা-১ ও ২ ব্লক এবং ঘাটালে ৩৩টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে"।

এদিকে জলের তোড়ে ভেসে গেছেন তুলসী রুইদাস নামক এক ব্যক্তি। ৪২ বছরের তুলসীর বাড়ি চন্দ্রকোনার ছত্রগঞ্জে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পলাশচাপড়ি এলাকায় রাজ্য সড়ক পারাপার করতে গিয়ে জলের তোড়ে তলিয়ে যান। তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করা গেলেও, তাঁকে বাঁচাতে পারেননি স্থানীয়রা। এখনও উদ্ধার হয়নি তাঁর দেহ।

অন্যদিকে, হাওড়ার আমতার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। লাগাতার বৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ডিভিসি দফায় দফায় জল ছাড়ার ফলে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর বেড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জলের তোড়ে আমতার গায়েনপাড়া এবং কুলিয়ায় দুটি বাঁশের সাঁকো ভেসে যায়। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা দীপাঞ্চল। এরফলে চরম দুর্ভোগ ভাটোয়া দীপাঞ্চলের। নদী না পেরোতে পেরে সেখানে আটকে কয়েক হাজার বাসিন্দা। স্থানীয় বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর আছে। যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না-হয় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে"।

হাওড়ার পাশাপাশি হুগলিতেও লাগাতার বৃষ্টির ফলে আরামবাগ-বদনগঞ্জ, গড়বেতা রাস্তার উপর গোঘাটের সাতবেড়িয়া দিয়ে বন্যার জলের স্রোত বইছে। কামারপুকুর ও জয়রামবাটির মধ্যবর্তী হলদি পোলের উপর দিয়ে জল বইছে। বাঁকুড়ার দিক থেকে প্রবাহিত বন্যার জল দু’টি রাস্তার উপর দিয়েই বয়ে চলেছে। টানা বৃষ্টির কারণে জলের তলায় সবজিখেত। যার ফলে মাথায় হাত কৃষকদের।

তবে বাঁকুড়ার বন্যা পরিস্থিতি বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টি না হওয়ায় শিলাবতী ও দামোদরের জল নামায় জলমুক্ত হয়েছে একাধিক সড়ক এবং সেতু। তবে গন্ধেশ্বরী ও দারকেশ্বরের জলস্তরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন স্থানীয়েরা। শুক্রবার বাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর মহাকুমা এলাকায় সরকারের দু'টি পৃথক আধিকারিক দল বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি
Congress: রাহুল গান্ধীর ৫৫তম জন্মদিনে চাকরি মেলার আয়োজন কংগ্রেসের! ৫০০০ কাজের সুযোগ

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in