

মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার দক্ষিণ দিনাজপুরের একটা গোটা পরিবার। ডাইনি অপবাদে পরিবারের তিনজনকে জোর করে মল খাইয়ে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ছ'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরিবারের ওই তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের বাসুরিয়া পঞ্চায়েতের ভাদ্রা রায় পাড়াতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে বেশ কিছু মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ওই গ্রামে। গ্রামবাসীদের সন্দেহ, কেউ কালা জাদু করেছে। এরপরে গ্রামের কিছু মানুষ তান্ত্রিকের সঙ্গে পরামর্শ করে। এরপর ওই তান্ত্রিক গ্রামের বাসিন্দা পরমেশ্বর রায়ের স্ত্রী পোতন রায়কে ডাইনি অপবাদ দেন।
তান্ত্রিকের নির্দেশমতো বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের শ্মশানে পুজো দেন গ্রামবাসীরা। এরপর ওই রাতেই পরমেশ্বরের বাড়িতে হানা দেয় গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, ডাইনি অপবাদে ওই পরমেশ্বরের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে এনে ব্যাপক মারধর করা হয়। বাধা দিতে এলে পরিবারের বাকি সদস্যদেরও মারধর করা হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই মহিলাই গ্রামবাসীদের খুন করছেন। এই অভিযোগ তুলে পরিবারের তিনজনকে মারধর করেন। এমনকি মলও খাওয়ানো হয়েছে তাঁদের।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গঙ্গারামপুর থানার আইসি-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। আহতদের উদ্ধার করে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আক্রান্ত তিন জন।
অন্যদিকে, স্বত:প্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করে পুলিশ গ্রামের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার তাদের গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়। গঙ্গারামপুরের এসডিপিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন গ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে। নতুন করে আর কোনও গন্ডগোল ঘটেনি"।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের গঙ্গারামপুর বিজ্ঞান কেন্দ্রর সম্পাদক ড. অমিত ঘোষ জানান, ‘‘সম্প্রতি এই ধরনের ঘটনা পতিরাম ও বালুরঘাটে ঘটেছে। মূলত যে সমস্ত পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করেন বা একা বাস করেন, তাদেরকে লক্ষ্য করে এবং তাদের সম্পত্তি হাতানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। এনিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসচেতন বৃদ্ধি করতে কাজ করব।’’
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন