
দিল্লির এক মাছ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ উঠল দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার তদন্তে নেমে মোট তিনজনকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শাসন থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতরা হলেন - সাদ্দাম মণ্ডল, সজ্জন আলম ওরফে লালন ও জসিমউদ্দিন মণ্ডল। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে ২০ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বারাসাত জেলা আদালত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দিল্লির বাসিন্দা নাজিম চৌহান ও উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগরের বাসিন্দা জসিমউদ্দিন মণ্ডল ওরফে রাজু যৌথভাবে বাদুড়িয়া থানা এলাকায় হাইব্রিড মাছ চাষের হ্যাচারি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এক বছর আগে সেই হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জসিমউদ্দিন দাবি করেন, নাজিম চৌহানের কাছে তিনি টাকা পান। পাল্টা একই দাবি করেন নাজিম। যা নিয়ে কিছুদিন ধরে বিবাদ চলছিল দু'জনের মধ্যে। যদিও পরবর্তীতে এক তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপে হ্যাচারি বিক্রি করে দু'জনের হিসাব নিকেশ মেটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেই মতো গত রবিবার দিল্লি থেকে কলকাতা আসেন নাজিম। কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই সেখানে গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন জসিমউদ্দিন। দিল্লির ব্যবসায়ী নাজিমকে নিয়ে ক্যাব বসিরহাটের দিকে এগোতে থাকে। শাসন থানার সন্ডালিয়া রেললাইন সংলগ্ন রাস্তায় প্রাতঃকৃত্য সারতে গাড়ি থেকে রাস্তায় নামেন জসিমউদ্দিন। সেই সময় পিছন থেকে আসা একটি গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে দিল্লির ব্যবসায়ী নাজিমকে তুলে নেন সেই গাড়িতে। নাজিমের যাতে কোনও সন্দেহ না হয়, তার জন্য জসিমউদ্দিনকেও একই গাড়িতে তুলে নেন অপহরণকারীরা। এর পরেই গাড়ি ছুটতে থাকে বসিরহাটের দিকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যবসায়ীকে বসিরহাটের একটি নির্জন জায়গায় আটকে রাখা হয়। এরপর দিল্লিতে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারকে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ এক কোটি টাকা চাওয়া হয়। অন্যদিকে, ঘটনার পরেই ক্যাব চালক মিরাজুল গাজি শাসন থানায় পুরো ঘটনার অভিযোগ জানান। অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশ। ঘটনার কিছু পরে মিরাজুলকে জসিমউদ্দিন ফোন করে জানান, চিন্তার কোনও কারণ নেই। টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা। বোঝাপড়া মিটে গেলে ওই ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এরপর পুলিশ সেই মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। সোমবার রাতে শাসন থানার পুলিশ ও স্বরূপনগর থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন অভিযুক্তকে। নাজিম চৌহানের পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ধৃত সজ্জন আলম ওরফে লালন যুব তৃণমূল নেতা। তাঁর স্ত্রী ফারিদা খাতুন চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭৩/এ বুথের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। অন্যদিকে, সামাদ মণ্ডল চারঘাত গ্রাম পঞ্চায়েতের বারঘরিয়ার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি। পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশের তদন্তের মোড়কে ঘোরাতে জসিমউদ্দিন নিজেও অপহৃত হওয়ার নাটক সাজিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বারাসাত জেলা আদালত ধৃতদের ২০ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।