Chandranath Sinha: রাজভবনের অনুমতির পরেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মন্ত্রীর নামে সমন জারির নির্দেশ

People's Reporter: চলতি বছরের ৩১ জুলাই তাঁকে তলব করা হলেও তিনি সেই তলব এড়িয়েছিলেন। তার আগে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে তলব করা হয়েছিল ২৫ জুলাই। সেবারও তিনি যাননি ইডি দপ্তরে।
ছবি - চন্দ্রনাথ সিনহা
ছবি - চন্দ্রনাথ সিনহাগ্রাফিক্স আকাশ
Published on

২০১১ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে তাঁর ঘোষিত মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭৫ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮৪২ টাকা এবং দায় ছিল ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামা অনুসারে তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬২ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৫৮ টাকা এবং কোনও দায় ছিল না। এর পাঁচ বছর পর ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামা অনুসারে তাঁর মোট সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ ১১ হাজার ৪১৪ টাকা এবং এবারেও কোনও দায় ছিল না। অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০২১ এর মধ্যে তাঁর মোট সম্পদ মূল্য ৭৫ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ। অঙ্কের হিসেবে তাঁর মোট সম্পদ মূল্য বেড়েছে ৩ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫৭২ টাকা।

ওপরে যে পরিসংখ্যান তা বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূলের তিনবারের বিধায়ক এবং রাজ্যের কারা ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার (Chandranath Sinha)। আপাতত যার বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার খাঁড়া ঝুলছে। এর আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ED) তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল। যদিও রাজভবন থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় আদালতে তা গ্রাহ্য হয়নি। তবে এবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Anand Bose) তাঁর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই চন্দ্রনাথ সিনহার বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছে ইডি-র বিশেষ আদালত। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শাসকদলের একাধিক শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেই নাম জড়ায় মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার। এর আগে একাধিকবার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি। সেইসময় তাঁর বাড়ি থেকে নগদে ৪০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হলেও সেই টাকার হিসেব তিনি দিতে পারেননি বলে জানিয়েছে সূত্র। এছাড়াও তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও দেড় কোটি টাকার অস্বচ্ছ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। জানা গেছে, তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, ২০১৬ থেকে ২০২১-এর মধ্যে তাঁর অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা পড়েছে। ২০১৬ এবং ২০২১-এ তাঁর দেওয়া দুটি হলফনামা যাচাই করলে সাদা চোখে দেখা যাবে এই দুই বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর ঘোষিত সম্পদের বৃদ্ধি হয়েছে ২ কোটি ৭১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৫৬ টাকা।

চলতি বছরের ৩১ জুলাই তাঁকে তলব করা হলেও তিনি সেই তলব এড়িয়েছিলেন। তার আগে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে তলব করা হয়েছিল ২৫ জুলাই। সেবারও তিনি যাননি ইডি দপ্তরে। পরপর দু’বার তলব এড়ানোর পরেই তৎপর হয় ইডি। মন্ত্রীর কাছে তাঁর সম্পত্তির নথি চেয়ে পাঠিয়েছিল ইডি। মন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যের নথি চাওয়া হয়েছিল।

গতবছরের ২২ মার্চ চন্দ্রনাথ সিনহার বোলপুরের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা ধরে ওইদিন তল্লাশি চলে। ওইদিনই ৪১ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা যায় এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিতও হয়।

আরও জানা যায়, বলাগড়ের অধুনা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীদের হাতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার সূত্র মিলেছিল মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। কুন্তলের বাড়ি তল্লাশি চালানোর সময় একটি রেজিস্টার উদ্ধার হয়। সেখান থেকেই কুন্তল ও চন্দ্রনাথের যোগাযোগের সূত্র পাওয়া যায় বলে অনুমান। অভিযোগ, অযোগ্যদের নিয়োগের বদলে তিনি মোটা টাকা কমিশন নিয়েছিলেন। তল্লাশির দিন মন্ত্রীর বোলপুরের বাড়ি থেকে আটক করা হয় একটি মোবাইল, বেশ কিছু জমির দলিল।

বুধবার রাজভবন থেকে অনুমতি আসার পরে এই বিষয়ে বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি আসবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এই অনুমতিতে তৃণমূলের অন্দরেও যে অস্বস্তি আরও বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। সূত্র অনুসারে, আপাতত আগাম জামিন নেওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য হবে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার। কারণ রাজভবনের আজকের অনুমতির পর এবার তাঁর সামনে বিশেষ কোনও বিকল্প খোলা রইলো না।

ছবি - চন্দ্রনাথ সিনহা
SSC Recruitment Scam: এসএসসি সমস্ত অন্যায়টা করেছে শিক্ষাদপ্তর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় - মহঃ সেলিম
ছবি - চন্দ্রনাথ সিনহা
Recruitment Scam: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রসন্ন ও এসপি সিনহার কয়েকশো কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ইডির!

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in