
উত্তমকুমার ব্রজবাসী, অঞ্জলি শীল-এর পর ফের আসাম থেকে এনআরসি-র নোটিশ পেলেন কোচবিহারের আরও এক বাসিন্দা। মাথাভাঙা-২ ব্লকের ঘোকসাডাঙা লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুশিয়াড় বাড়ি এলাকার নিশিকান্ত দাস দু'মাস আগে আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্ট থেকে এনআরসির নোটিশ পান। ভারতীয় হওয়ার প্রমাণস্বরূপ তিনটি নথি আদালতে পেশ করেছিলেন নিশিকান্ত। যদিও সেই প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হয়নি।
চলতি মাসের প্রথম দিকে কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে এনআরসি-র নোটিশ দিয়েছিল আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্ট। বাংলার দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের থেকে আসাম কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে? এই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এমনকি ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে উত্তমকে দাঁড় করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, দরকার পড়লে আসাম যাবেন তিনি।
এই আবহে শুক্রবার আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার গৃহবধূ অঞ্জলি শীল এনআরসি নোটিশ পান। এদিন দুপুরে তাঁর বাড়িতে পৌঁছায় নোটিশটি। যেখানে উল্লেখ আছে, তাঁকে ১৯ আগস্ট আদালতে গিয়ে নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। যদিও নোটিসটি প্রথমে এসেছিল কোচবিহার পুলিশ সুপারের অফিসে। অবশেষে শুক্রবার ফালাকাটা থানার পুলিশের তরফে অঞ্জলিদেবীর ঠিকানায় তা পৌঁছে দেওয়া হয়।
আসামের মেয়ে অঞ্জলি। এমনকি তাঁর স্বামীরও জন্ম সেখানে। তবে বেশ কয়েক বছর আগে চলে এসেছেন উত্তরবঙ্গে। এখন ফালাকাটাই তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন তিনি এই নোটিশ পেলেন? যদিও এটা নিয়ে ভয়ের বদলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অঞ্জলি। তিনি জানিয়েছেন, "যেখান থেকে নোটিস এসেছে, সেখানে গিয়ে দেখি যে এটা সত্যি কিনা। তারপর এ বিষয়ে যা করার করব। এখনই কিছু বলতে পারছি না"। এমনকি এই নিয়ে অঞ্জলিকে আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, শনিবার কোচবিহারের বাসিন্দা নিশিকান্ত দাসের এনআরসি নোটিশ পাওয়ার খবর সামনে এসেছে। দু'মাস আগের এনআরসি নোটিশে অহমিয়া ভাষায় লেখা রয়েছে, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১-এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। নোটিস পাওয়ার পর জমির কাগজপত্র, ভোটার, আধার কার্ড অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্টে পেশ করেন তিনি। তবে সেগুলি আদালতে গ্রাহ্য হয়নি বলে জানিয়েছেন নিশিকান্ত। তাঁকে ভোটার তালিকায় বাবার নাম দেখাতে বলা হয়েছে।
নিশিকান্ত দাস জানিয়েছেন, ছাব্বিশ বছর আগে আসামে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে পুলিশ। পরে যদিও প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর আসামে আরও ছ'মাস কাজ করে কোচবিহার ফিরে এসেছিলেন। পরবর্তীতে আর আসামে যাননি কাজ করতে।
আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্ট থেকে বাংলার দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণ চেয়ে এনআরসির নোটিশ পাঠানো নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি শাসিত আসাম সরকারের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ বাংলার শাসক দল তৃণমূল। ইতিমধ্যে এই নিয়ে সোচ্চার হয়ে বড়সড় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তৃণমূল। সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন