পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৮ জনের মৃত্যু! একাধিক ধারায় মামলা দায়ের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে

People's Reporter: সোমবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে এই বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতোটাই ছিল যে দোতলা বাড়ি পুরোটাই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক দূর পর্যন্ত ছিটকে এসেছে বাড়ির আসবাবপত্র।
পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণ
পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণছবি - সংগৃহীত
Published on

দক্ষিণ ২৪ পরগণার পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের জেরে একই পরিবারের ৮ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চার জন শিশু। ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান। একজনকে দুর্ঘটনার পরে গুরুতর আহত অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। বাড়ির বাকি তিন সদস্য ওই দুর্ঘটনার সময় বাইরে ছিলেন বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাট থানা এলাকার দক্ষিণ রায়পুরের তৃতীয় ঘেরি এলাকায় চন্দ্রকান্ত বণিক এবং তুষার বণিকের বাড়িতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাড়িতে বেশ কিছু বাজি মজুত রাখা ছিল। তা থেকেই বিস্ফোরণটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।

বিস্ফোরণের জেরে সোমবার রাতেই মৃত্যু হয় বণিক পরিবারের সাত সদস্যের। তাঁরা হলেন চন্দ্রকান্ত ও তুষারের বাবা অরবিন্দ বণিক (৬৫), ঠাকুমা প্রভাবতী বণিক (৮০), চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিক (২৮), দুই সন্তান অর্ণব বণিক (৯) ও অস্মিকা বণিক (৮ মাস) এবং তুষারের দুই সন্তান অনুষ্কা বণিক (৬) ও অঙ্কিতা বণিক (৬ মাস)। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় তুষারের স্ত্রী রূপাকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। যদিও মঙ্গলবার সকালে তাঁরও মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় চন্দ্রকান্ত, তুষার এবং তাঁদের মা বাড়িতে ছিলেন না।

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই চন্দ্রকান্ত বণিক এবং তাঁর ভাই তুষার বণিকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রজু করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ঘরে বিপজ্জনক বস্তু মজুত রাখা, অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা-সহ মোট ছ’টি ধারায় মামলা রজু করা হয়েছে। এমনকি দমকল আইনেও মামলা রজু হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনার পর বাড়ির পাশের একটি ঘর থেকে বাজি তৈরির মশলা-সহ আরও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামেই রয়েছেন দুই ভাই।

বাজি তৈরির পারিবারিক ব্যবসা ছিল বণিক পরিবারের। স্থানীয় সূত্রে খবর, বড় ভাই চন্দ্রকান্তই এই ব্যবসা সামলাতেন এবং ছোট ভাই তুষার তাঁকে সাহায্য করতেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, বাজি তৈরিতে লাইসেন্সও রয়েছে তাঁদের। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, বণিক বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরেই অবৈধ শব্দ বাজি তৈরি হচ্ছিল। প্রশাসন আগে থেকে পদক্ষেপ করলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। এমনকি বাড়িতে অবৈধ বাজি মজুত রাখত বলেও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।  

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে এই বিস্ফোরণটি ঘটে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই সময় বাড়ি থেকে পর পর বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতোটাই ছিল যে দোতলা বাড়ি পুরোটাই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক দূর পর্যন্ত ছিটকে এসেছে বাড়ির আসবাবপত্র।

যদিও পাথরপ্রতিমার তৃণমূল বিধায়ক সমীর জানার, দাবি বাড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা ছিল। সেটাতেই আগুন রেখে পরে ওই সিলিন্ডার ফেটেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে বণিক বাড়িতে যে বিস্ফোরণ মজুত ছিল, সেটা মেনে নিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, দূরে একটা জায়গাতে আতসবাজি তৈরি করা হয়। তবে কিছু জিনিসপত্র বাড়ির ভিতরেই থাকে।

এদিকে সোমবার রাতেই গোটা গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘিরে রাখা হয়েছে বাড়িটিকেও। মঙ্গলবার ফরেন্সিক দল গিয়ে দুর্ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে বলে জানা যাচ্ছে।

পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণ
TMC: 'পার্টি অফিসে শতশত চামচাদের নিয়ে বসে থাকেন...', কেলগ-কাণ্ডে দেবাংশুর নিশানায় দলের একাংশ

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in