
পশ্চিমবঙ্গে কমছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। তথ্য বলছে, গত ১৩ বছরে রাজ্যে ম্যানগ্রোভ কমেছে ৩৬ বর্গ কিমি। লাগাতার বাদাবন ফাঁকা হওয়ার কারণে ধসছে রাজ্যের প্রাকৃতিক সুরক্ষা বলয়। সঙ্কট বাড়ছে সুন্দরবনের। যার ফলে বিপদ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
রাজ্যে উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবনে রয়েছে বেশিরভাগ বনাঞ্চল। তার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল লাগোয়া ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। দেশের ফরেস্ট সার্ভের চলতি মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ২১১৯.১৬ বর্গ কিমি। ২০০৯ সালে যেটা ছিল ২১৫২ বর্গকিমি। ২০১১-তে হয়েছিল ২১৫৫ বর্গ কিমি। অর্থাৎ, আয়লার পরেও ৩ বর্গ কিমি বাড়লেও গত ১৩ বছরে প্রায় ১৩ বর্গ কিমি কমেছে ম্যানগ্রোভ অঞ্চল।
এ বিষয়ে রাজ্যের বন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, ১৯৮৭ সালের পর লাগাতার বেড়েছিল ম্যানগ্রোভ। সে বছর ছিল ২০৭৬ বর্গ কিমি। কিন্তু ২০১৩ সালের পর্যালোচনায় দেখা গেছে সুন্দরবন-সহ পশ্চিমবঙ্গে কমেছে ম্যানগ্রোভ এলাকা। যদিও আর এক বন দপ্তর আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘২০২১ সালের পর ২ বর্গ কিমি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল বেড়েছে। ফলে আগের থেকে কমছে বলা যাবে না’।
এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘ম্যানগ্রোভ তিন ধরণের। খুব গভীর ম্যানগ্রোভ, মাঝারি গভীর ম্যানগ্রোভ এবং খোলা জায়গার ম্যানগ্রোভ। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দুটি ক্ষেত্রের ম্যানগ্রোভ কমেছে অনেকটাই’। প্রসঙ্গত, দেশে মূলত তিনটি জায়গা, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দেখা যার ‘খুব গভীর ম্যানগ্রোভ’ বনাঞ্চল। রাজ্যে মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগণায় দেখা যায় এই ধরণের ম্যানগ্রোভ।
রাজ্যের বন দপ্তর সূত্রে খবর, ‘খুব গভীর ম্যানগ্রোভ’ অরণ্য ২০১১ সালে ছিল ১০৩৮ বর্গ কিমি। ২০১৭ সালে তা নেমে হয়েছিল ৯৯৯ বর্গ কিমি। বর্তমানে তা আরও কমে হয়েছে ৯৮১.৬৩ বর্গ কিমি। অন্যদিকে, ‘মাঝারি গভীর ম্যানগ্রোভ’ ২০১১–তে ছিল ৮৮১ বর্গ কিমি। এখন তা নেমে হয়েছে ৭০৩.৭৯ বর্গ কিমি। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের কথায়, এই পরিসংখ্যান খুবই বিপজ্জনক। বিপর্যয় মোকাবিলায় এই দুই এলাকার ম্যানগ্রোভ বেশ শক্তিশালী। আর সেগুলিই কমছে। তবে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই বেড়েছে ‘খোলা জায়গার ম্যানগ্রোভ’।
রাজ্যে কেন কমছে বাদাবন? প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, এর কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কাজের অভাবে উপার্জনের জন্য গভীর বাদাবন এলাকায় মানুষের বেপরোয়া যাতায়াত, জনপদে লাগামছাড়া নির্মাণ, বর্জ্য নিষ্কাষণ, নদীতে জ্বালানী তেল ছড়ানো। এছাড়া, মিষ্টি জল বয়ে নিয়ে যাওয়া বিদ্যাধরীর মত নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, বাদাবন সাফাই করে ভেড়ি হয়েছে। এছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়ছে পর্যটনজনিত নির্মাণ।
২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হবে’। পরে সেই সংখ্যাটি বাড়িয়ে ১০ কোটি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক বন দপ্তরের আধিকারিকের কথায়, ‘লাগানো হয়েছিল কিছু। তবে দশ কোটি নাকি দশ হাজার তা গুণে দেখা হয়নি’।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন