

স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষায় কোনও উত্তর না লিখেই পাশ করেছেন ৯৫২ জন। এমনকি বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতাও করছেন তাঁরা। বুধবার, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে- স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে যে উত্তরপত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই উঠে এসেছে এই চিত্র।
একাধিক ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্রের নমুনায় দেখা যাচ্ছে, সাদা খাতা জমা দিয়েই মোট ৫৫ নম্বরের মধ্যে কেউ কেউ পেয়ে গিয়েছেন ৫৩ নম্বর। আর, সেই সূত্রে অনেকেই ‘র্যাঙ্ক’ করেছেন বেশ উপরের দিকে। অর্থাৎ, কোনও উত্তর না লিখে, বেআইনি ভাবে শিক্ষকতার চাকরি হাতানোর যে প্রমাণ আছে, তা তুলে ধরেছে কমিশন!
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই, সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসেছিলেন আলি হাসান ফারুক (Ali Hasan Faruk) নামে এক চাকরিপ্রার্থী। তাঁর বিষয় ছিল অঙ্ক। কিন্তু, কোনও উত্তর না লিখে তিনিও অন্যান্যদের মতো ‘সাদা খাতা’ জমা দিয়েছেন। আর, মোট ৫৫ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৫৩ নম্বর। কমিশনের মেধাতালিকায় তাঁর র্যাঙ্ক হয়েছে ২০।
নমুনা কপিতে দেখা যাচ্ছে, OMR Sheet-এ আলি হাসান ফারুকের নামসহ রোল নম্বরও রয়েছে। নীচে আছে তাঁর এবং পরীক্ষার ইনিভিজিলেটর (Invigilator)-এর স্বাক্ষর। কিন্তু, সেই OMR Sheet-এ ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে। কোনও উত্তর না লিখেই জমা দেওয়া হয়েছে খাতা। তারপরেও, আদালতের নির্দেশে কমিশনের প্রকাশিত মেধা তালিকায় তিনি জায়গা পেয়েছেন।
ফাঁকা খাতা জমা দিয়ে, শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। অনেক দিন ধরেই এই অভিযোগে তুলে সরব হয়েছেন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকপদে চাকরিপ্রার্থীরা। আর, সেই অভিযোগ যে সত্য, তা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে।
সেখ সেতাবুদ্দিন নামে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকপদের এক চাকরিপ্রার্থী তথা মামলাকারী টেলিফোনে পিপলস রিপোর্টারকে জানান, 'কমিশন মাত্র ৯৫২ জনের OMR sheet প্রকাশ করেছে। যারা পরীক্ষায় পাস না করলেও, তাঁদের চাকরি দিয়েছে কমিশন। তবে, এটাই দুর্নীতির পুরো অংশ নয়। সিবিআই তদন্তের আগে অনেক OMR sheet পুড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। সিবিআই হাতে পেয়েছে মাত্র ৪০ OMR sheet-র হার্ড কপি।’
তিনি জানান, ‘উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের যে সংস্থাকে OMR sheet রিড করতে দিয়েছিল কমিশন, সেই সংস্থার হার্ড ডিস্কের তথ্যের সঙ্গে কমিশনের তথ্য মিলছে না। সিবিআই তদন্তে জানতে পারে, গাজিয়াবাদে OMR sheet পরীক্ষায় যে প্রার্থী ১০ বা ২০ পেয়েছেন, কমিশনের হার্ডডিস্কে পাওয়া তথ্যে তাঁরা সকলেই ৫০ নম্বরের উপরে পেয়েছেন। অনেকে আবার কোনও উত্তর না লিখেই পাস করে গিয়েছেন। সবই হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে।’
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন