
কলেজ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও তাঁর অধ্যাপিকা বান্ধবী মোনালিসা দাসের (Monalisa Das)। বুধবার উচ্চশিক্ষা দপ্তরে ডেপুটেশনসহ দুর্নীতির যে তথ্য জমা দিয়েছে কলেজ চাকরি প্রার্থীরা, তাতে রয়েছে এই নাম।
শুধু তাই নয়, মোনালিসা দাসের নাম সহ 'দুর্নীতি মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ১২২ জনের নাম'ও ই-মেল মারফত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) জানিয়েছেন কলেজ চাকরি প্রার্থীরা।
ডেপুটেশনে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, 'প্রভাব খাটিয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কলেজ সার্ভিস কমিশনের (CSC) মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দিতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অধ্যাপিকা বান্ধবী মোনালিসা দাস।'
মোনালিসা ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে মন্ত্রী জাকির হোসেন (Minister Jakir Hossain), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার স্নেহমঞ্জু বসু (Snhemanju Basu), প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সমীর পোদ্দার (Ex. TMC MLA Samir Poddar)সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম।
আন্দোলনকারীদের দাবি, 'এই সকল প্রভাবশালীদের প্রভাব এতো বেশি যে, তাঁরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের এমন কলেজে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন, যে কলেজের নাম ভ্যাকান্সি লিস্টে ছিলই না। যেমন মোনালিসা দাসের হাত ধরে চাকরি পাওয়া মথুর গুপ্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভ্যাকান্সি লিস্টের বাইরে থাকা কবি নজরুল কলেজে।'
শুধু তাই নয়, পার্থ ঘনিষ্ঠ অধ্যাপক-অধ্যাপিকাবৃন্দ যাঁরা ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকতেন, তারা নিজেদের স্কলার ও কাছের মানুষদের প্রভাব খাটিয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন বেকুটার (BECUTA) নেতা শুভঙ্কর পাত্রের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ কলেজে চাকরি প্রার্থীদের।
এ নিয়ে CSC-র মেধা-তালিকাভুক্ত প্রার্থী ড. ক্ষুদিরাম চক্রবর্তী বলেন, 'পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি, প্রার্থীদের নামের পাশে কোনো নম্বর প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি কাকে, কোন কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকাও CSC প্রকাশ করতে পারছে না।'
অন্য আরেক মেধা-তালিকাভুক্ত প্রার্থী বিনয় কৃষ্ণ পাল দাবী করেন, 'মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তর এই দুর্নীতি বহু আগে থেকেই জানতেন। মেধা তালিকা প্রকাশের পর থেকেই আমরা একাধিকবার ই-মেইল, চিঠি, ডেপুটেশন জমা দিয়েছি। অথচ আমাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। এতদিনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায়, এই দুর্নীতির পিছনে তাদেরও হাত ছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।'
গত ২৫ জুলাই, 'বঙ্গবিভূষণ' পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা দাবি করেন, তিনি দুর্নীতির বিষয়ে কিছু জানতেন না। জানলে ব্যবস্থা নিতেন। মিডিয়াও তাঁকে কিছু জানায় নি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি খারিজ করে এ দিন আবার ডেপুটেশন-সহ ২০১৮-র নিয়োগ দুর্নীতির নমুনা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব মণীশ জৈনকে দিয়েছেন চাকরি প্রার্থীরা। একইসঙ্গে, সকল তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকেও ইমেইল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন CSC-র মেধা-তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা।
এদিনও তাঁরা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক কর-সহ এই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সকলকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত সকল প্রার্থীদের দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন