
বছর ঘুরতেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নিয়োগ দুর্নীতিতে জেরবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। যার মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি রাজ্য সরকারের সবচেয়ে বড়ো অস্বস্তির কারণ। ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ার পাশাপাশি শাসক দলের একাধিক মন্ত্রী-বিধায়কেরা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেলে থেকেছেন। এই মামলায় এখনও জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এটাকেই আগামী বছর নির্বাচনের আগে বিরোধীরা হাতিয়ার করবে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য আগে থেকেই পদক্ষেপ করছে শাসক দল।
দলের মূল সংগঠনের পাশাপাশি শাখা সংগঠনগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি কোনও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দলের নাম ভাঙিয়ে কোনও সুপারিশ দেওয়া যাবে না। এই নিয়মের আওতায় আনা হচ্ছে রাজ্যের পুরসভাগুলিকেও। দলের নির্দেশ, পুরসভা কোন ঠিকাদারি সংস্থাকে কাজে নিয়োগ করবে, তা মেয়র, দলের নেতা, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত প্রধান সুপারিশ করতে পারবেন না।
এই নিয়ে দলের এক প্রথম সারির নেতা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, "কয়েক বছর ধরেই শীর্ষ নেতৃত্ব এই নিয়ে গুরুতর কিছু অভিযোগ পেয়েছে। যেমন কোনও ঠিকাদারি সংস্থা রাস্তা সারাই হোক বা কোনও বিভাগে কোনও কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। কিন্তু দলের নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে নিজেদের লোক ঢুকিয়েছেন। এমনকি এমন প্রমাণ মিলেছে, নিয়োগকারী ওই নেতা একাধিক কর্মীকে কাজে নিয়োগ করে কাটমানি নিয়েছেন। পূর্বের এহেন অভিজ্ঞতা থেকেই সব ধরনের নিয়োগ থেকে দলীয় নেতাদের দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে"।
শাসক দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কলকাতার কয়েকটি বৃহত্তর শিল্পাঞ্চল থেকে এহেন অভিযোগ জমা পড়েছিল। অভিযোগ ছিল, শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একাংশ তাঁদের পছন্দের লোককে নিয়োগ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও নিয়োগ হচ্ছে। আবার অনেক সময় পারিশ্রমিক কেটেও নেওয়া হচ্ছে। এরপরেই রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী মারফত শ্রমিক সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এমনকি পুরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার সেই সমস্ত নেতাদের রুখতে চান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এক শাখা সংগঠনের প্রধান জানান, এবার কোনও স্তরেই নিয়োগের ক্ষেত্রে আর দাদাগিরি করতে পারবেন না কেউ। কোনও নেতার ব্যক্তিগত দুর্নীতির দায় দল নেবে না আর। অভিযোগ প্রমণিত হলে সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে দল।
তবে এহেন সিদ্ধান্ত নিতে শাসক দল অনেকটাই দেরি করে ফেলেছে বলে মনে করছেন দলের অন্দরের একাংশ। এনিয়ে একাংশের বক্তব্য, ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। একাধিক শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়েন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। কিন্তু সেই সময় এনিয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও, আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন