
"যাঁরা টিভিতে মুখ দেখাতে চান, তাঁরাই এখনও বসে আছেন। এটা নাটক হচ্ছে।" - বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এমনকি তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর কথার উপরে আস্থা রাখলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
সম্প্রতি দুর্নীতির কারণে ২০২৬ সালের পুরো প্যানেলের চাকরি বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। যার ফলে চাকরিহারা হয়েছেন ২৫,৭৩৫ জন। বৃহস্পতিবার থেকে এই চাকরিহারাদের একাংশ বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। সে দিন রাতেই চাকরিহারাদের উপর লাঠিচার্জ করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। চাকরিহারাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীকে সশরীরে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। আশ্বস্ত করতে হবে। লাঠিচার্জের পর শুক্রবারও তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ জারি রাখে। শনিবার এই অবস্থানের তৃতীয় দিন।
চাকরিহারাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। কারণ সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এই ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। শনিবার এই নিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘নেতাজি ইন্ডোরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যা ব্যবস্থা করার করবেন। সেই বিশ্বাসটা রাখলেই হয়ে যেত। এত গোলমালের দরকার ছিল না। বেশির ভাগ মানুষই বাড়ি চলে গিয়েছেন। যাঁরা টিভিতে মুখ দেখাতে চান, তাঁরাই এখনও বসে আছেন। এটা নাটক হচ্ছে"।
এরপরেই রাজ্যের মন্ত্রীর দাবি, এই আন্দোলনের ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। ফিরহাদ বলেন, ‘‘যখন সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন যাবে, তখন যদি কেউ বলেন, শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন, তখন তো তাঁদেরই বিপদ বাড়বে। বিকাশ ভবনে কর্মীদের আটকে রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মানুষের উপর অত্যাচার করে তো আন্দোলন চলতে পারে না। দুর্নীতির বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট দেখছে। তারা যা বিচার করেছে, সেটা তারাই বদলাতে পারে। বিকাশ ভবনে আন্দোলন করে তা বদলানো যাবে না"।
রাজ্যের মন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অবস্থানরত চাকরিহারারা। এক আন্দোলনকারী বলেন, "সরকারের বা শাসকদলের কেউ তো এক বারও আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করলেন না! এই ধরনের মন্তব্য আমরা গায়ে মাখি না। আমাদের হকের চাকরি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বোধ থাকলে উনি এই মন্তব্য করতে পারতেন না"।
অন্য এক চাকরিহারা বলেন, ‘‘মানবিকতা থাকলে উনি এটা বলতে পারতেন না। আমরা যোগ্য। এত দিন চাকরি করার পর আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। এটা নাটক! ওঁর কথা মানি না"।
আর এক জন বলেন, ‘‘এটা যদি নাটক হয়, তবে নাটকের সংজ্ঞা কী, দেখতে হবে। আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ন্যায্য দাবিতে এই আন্দোলন করছি। এটাকে নাটক বললে কিছু করার নেই। আন্দোলন চলবে"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন