‘জয় শ্রীরাম বলো, নাহলে ২৫ হাজার টাকা দাও!' দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ মালদার পরিবারের

People's Reporter: দিল্লিতে 'নির্যাতিত' সেই মালদহের পরিবারকে কলকাতায় এনে সাংবাদিক বৈঠক করল তৃণমূল। ওই পরিবারের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলেছিল।
কুণাল ঘোষ, সাজনু পারভিন, ফিরহাদ হাকিম
কুণাল ঘোষ, সাজনু পারভিন, ফিরহাদ হাকিমছবি - সংগৃহীত
Published on

দিল্লিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এমনকি নিজের সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োও পোস্ট করেছিলেন তিনি। যদিও সেই ভিডিও ভুয়ো বলে দাবি করেছিল দিল্লি পুলিশ। এবার দিল্লিতে 'নির্যাতিত' সেই মালদহের পরিবারকে কলকাতায় এনে সাংবাদিক বৈঠক করল তৃণমূল। ওই পরিবারের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলেছিল। তিনি মুসলিম হওয়ায় সেটা বলতে অস্বীকার করায় ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়। না দিলে তাঁকে এবং তাঁর শিশুকে মারধর করা হয়।

গত রবিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। যেখানে এক ব্যক্তি বলছেন, বাংলা ভাষা মাতৃভাষা হওয়ার অপরাধে দিল্লি পুলিশ তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানকে মারধর করছে। যদিও সোমবার দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর শেয়ার করা ওই ভিডিওটি ভুয়ো। মালদহের চাঁচলের স্থানীয় এক নেতার কথায় দিল্লিতে বসবাসকারী পরিবার ওই ভিডিয়ো তৈরি করেছিল।

যদিও বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে দিল্লি পুলিশের দাবিকে মিথ্যা বলে জানান পরিবারের অন্যতম সদস্য সাজনু পারভিন। তাঁর দাবি, দিল্লি পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে, তা আংশিক। যেখানে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানকার কোনও ফুটেজ নেই। সাজনু জানিয়েছেন, একদিন আচমকাই চারজন ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে আধার কার্ড দেখতে চান। তাঁর স্বামী মোক্তার খানের খোঁজ করা হয়। অভিযোগ, আধার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও ওই চার জন সাজনুকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দেগে দেন। এমনকি তাঁরা যাতে এলাকা না ছাড়েন, তার নির্দেশও দেওয়া হয়।

সাজনু আরও অভিযোগ করেছেন, পরেরদিন ফের চার জন আসেন তাঁর বাড়িতে। সেই সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দুই মহিলাও। তাঁরাই সাজনু এবং তাঁর সন্তানকে কোনও এক জায়গায় নিয়ে যান বলে দাবি। সাজনু বলেন, ‘‘সেখানেই আমাকে বলা হয় ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে। আমি বলি, আমি মুসলিম। আমি ওটা বলতে পারব না। তার পর আমার থেকে ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়"। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে এবং তাঁর শিশুকে মারধর করা হয়।

সাজনু এবং তাঁর পরিবারকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার পিছনে ভূমিকা রয়েছে তৃণমূলের দুই রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম এবং মৌসম বেনজির নূরের। বুধবার সাজনুকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ করার পরেই নির্যাতিত পরিবারের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে জায়গায় বাচ্চাটিকে ও তার মাকে মারধর করা হয়েছিল, সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়নি। উল্টে পরিবারকে আটকে রেখে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলা মানেই বাংলাদেশি। তাঁরা বলেছেন তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের মালদহের বাসিন্দা, তাও রেহাই পাননি"।

এমনকি দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন সাজনু বলেও জানানো হয় পরিবারের তরফ থেকে। অন্যদিকে, ভুয়ো ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছেন বলে দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন কাঁথির বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী।

কুণাল ঘোষ, সাজনু পারভিন, ফিরহাদ হাকিম
পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ভুয়ো ভিডিও ছড়াচ্ছেন! মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in