
সোমবার রাতে টানা পাঁচ ঘন্টার বৃষ্টিতে জলের তলায় গোটা কলকাতা। জলমগ্ন শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক মানুষের প্রাণ গেল। মঙ্গলবার ভোর থেকে এখনও পর্যন্ত একের পর এক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন এলাকায়। একবালপুর, নেতাজিনগর, বেনিয়াপুকুর, গড়িয়াহাট ও গড়ফা— সব জায়গা থেকেই মিলেছে মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর।
এই মৃত্যুর জন্য সিইএসসি-কেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “এর দায় সিইএসসি-কে নিতে হবে। এখানে ব্যবসা করছে। আর পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের (মর্ডানাইজেশন) কাজ করছে রাজস্থানে। এখানে আধুনিকীকরণের কাজ করছে না। বলতে বলতে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে।”
নেতাজিনগর বাসস্ট্যান্ডের কাছে স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত কুণ্ডু প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবার সকালে দোকান খোলার জন্য বেরিয়েছিলেন। সাইকেলে চেপে এসে তিনি সেটি একটি ভেজা বাতিস্তম্ভে হেলান দিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। মুহূর্তের মধ্যেই বিদ্যুতের ঝটকায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে পুলিশ এসে তাঁর দেহ উদ্ধার করে। ঘটনায় স্তম্ভিত এলাকার মানুষজন। স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এনএসসি বোস রোডে জল দাঁড়াবে, আমি আমার জন্ম থেকে দেখিনি। কলকাতার যা ধারণক্ষমতা, তার চেয়ে দশ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আমরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা করছি যাতে এই অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি পান।”
মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার সময় একবালপুরের হোসেন শাহ রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন জিতেন্দ্র সিংহ নামে ৬০ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়। তাঁকে দ্রুত এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, বেনিয়াপুকুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান আরও একজন। গড়িয়াহাট এবং গড়ফায় জলমগ্ন এলাকা থেকেও দু জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। যদিও তাঁদের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবু প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
সোমবার রাত থেকে টানা বর্ষণে উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র জলের তলায়। দেবীপক্ষের শুরুতেই জলে ভাসছে কলকাতা ও আশপাশের এলাকা। বহু রাস্তাঘাট, অলিগলি, এমনকি আগে যেখানে কখনও জল জমেনি, সেখানেও এখন হাঁটু সমান জল। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে পাঁচ ঘণ্টায়। জানা গেছে, প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর, গাড়ি সবই জলের নীচে। জল নামার কাজ শুরু হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন